হঠাৎ কোটিপতি সেই ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা হেদায়েতুল আলম রেজার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত থেকে হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এ তদন্ত চলাকালে এবার প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচলিয়া বাজার এলাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন কয়েকজন।
সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে পাঁচলিয়া বাজার এলাকায় আন্তর্জাতিকমানের ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণকাজের সাব-ঠিকাদার হিসেবে বালু সরবরাহের কাজ করছিলাম। সেখানে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম রেজা।
তিনি বলেন, বালু সরবরাহের সময় গত ১৫ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার সমর্থক আব্দুল্লাহ, রমজান আলী, এনামুল, হাফিজুল ইসলাম, রঞ্জু, দুলাল, তোতা মিয়া ও মো. আমিরসহ ২০/২৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এসময় তারা আমার বালুভর্তি ট্রাকের চালক শাহ আলী ও রানাকে বলেন যে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে এখানে কোনো বালু ফেলা যাবে না। প্রতিবাদ করায় তারা এসময় ওই দুই ট্রাকচালককে ব্যাপক মারপিট করেন। তাদের ত্রাসের কারণে একপর্যায়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর আমার ট্রাকের চালকরা ভয়ে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মোজাম্মেল হক নামে অপর ভুক্তভোগী বলেন, পাঁচলিয়া বাজারে আমার একটি হোটেল ছিল। চেয়ারম্যানের লোকজন তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। কিন্তু চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমার দোকান সম্পূর্ণ লুট করে নিয়ে যান। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়েছে।
সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম রেজা এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শুধু নিজে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম রেজা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মর্সূচি পালন করা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবার আমি প্রার্থী হবো। এ কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেড জেড তাজুল হুদা বলেন, নির্মাণাধীন ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম রেজার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে শূণ্য থেকে কোটিপতি হওয়ার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাবনা কার্যালয় ও ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে করা লিখিত অভিযোগের তদন্ত করছে দুদকের পাবনা সমন্বিত কার্যালয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর দুদক কার্যালয়ে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
দুদকে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হেদায়েতুল আলম ২০১১ ও ২০১৬ সালে টানা দু’দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হয়েই উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চল হাটিকুমরুল এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন তিনি। সব বৈধ-অবৈধ ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। মার্কেট, পরিহবন ব্যবসা, মৎস্য আড়ত, বরফ কারখানাসহ সব কিছুই তার ইশারায় চলে। এ অঞ্চলের মাদক ব্যবসাও নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। এভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে পর্যায়ক্রমে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, সুপার মার্কেট, জায়গা-জমির মালিক বনে যান তিনি।