অপরাধে জড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা

0

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগ। যে কমিটির অধিকাংশ নেতারই নেই ছাত্রত্ব। তাদের অনেকে আবার বিবাহিত বা চাকরিজীবী। এছাড়া একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মাদক কারবার ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। ফলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের পাশাপাশি সংগঠনটি নানাভাবে বিতর্কিত হচ্ছে। আর এর জেরে দলের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনটির সাধারণ কর্মীরা দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ৮ জুন সম্মেলনের মাধ্যমে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওইদিন শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনকে সভাপতি ও আসাদুজ্জামান রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৮ জুন ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২ জুলাই ৫৭ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে বিতর্কিতদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। বর্তমান কমিটির সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন ২০১৬ সালের ৩১ মে বিয়ে করেন। তার সন্তানও হয়েছে। তিনি বর্তমানে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে ছাত্রলীগের কোনো প্রকার কার্যক্রমে দেখা যায় না। সহসভাপতি উজ্জ্বল দাস, সোহেল বিশ্বাস, তাজমুল হক তাজু, আসাদুজ্জামান বাবু, মিনহাজ সুজন ও মো. রেদোয়ান মারুফসহ কমিটির আরও অনেকে রয়েছেন বিবাহিত। সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল হঠাৎ করে কয়েক মাস আগে বৌ-বাচ্চার ছবি ফেইসবুকে দিয়ে হইচই ফেলে দেন। কবে তিনি বিয়ে করেছেন তা কেউ জানে না। কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান ইমরান, আলিমুল জিয়া, মিরাজ হোসেন ও হিরন হাওলাদার এবং দপ্তর সম্পাদক শাহীন আলম, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান মিলনসহ বিবাহিত রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। অন্যদিকে সহসভাপতি লাবু মোড়ল, উজ্জ্বল দাস, দপ্তর সম্পাদক শাহীন আলম, উপদপ্তর সম্পাদক  চয়ন বালা এবং গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক দিবাকর সাহাসহ অনেকে রয়েছেন চাকরিজীবী।

অপরাধমূলক কাজে জড়িয়েছেন যারা : বটিয়াঘাটা উপজেলায় ঘের দখল করতে গিয়ে ঘের কর্মচারী নজরুল ইসলাম হত্যার আসামি হন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি রণবীর বাড়ৈ সজল। তিনি নগর কমিটির সাবেক সভাপতি দেব দুলাল বাড়ৈ বাপ্পীর ভাই। সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বলছে, সাবেক সভাপতির ভাই হওয়ার কারণে ওই ঘটনার পরেও সজলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি নগর নেতারা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কমার্স কলেজে অস্ত্র মামলা এবং একটি হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়। সহসভাপতি হিরক কুমার গাইন অস্ত্র ও মাদকসহ র‌্যাবের হাতে আটক হন। তার কক্ষ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার হয়। পরে ছাড়া পান তিনি। আরেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান মান্না মাদক ও চাঁদাবাজি মামলার আসামি হওয়ার পর পদ পেয়েছেন। সহসভাপতি সমীর কুমার শীল মাদক মামলার আসামি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলীমুল জিয়ার বিরুদ্ধে রাব্বী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। চার্জশিটেও তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে বাইরে রয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সাবেক কাউন্সিলর হালিমা ইসলামের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলা চালান উপপ্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান বাদশা। তিনি বাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তারও হন। শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক শেখ সবুজের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলা হয়। উপ-ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক শরীফ জান্নাতুন নূর টিকলীর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে নগর ছাত্রলীগের কমিটির নেতাদের যখন এ অবস্থা, তখন অধস্তন কর্মীরাও ইচ্ছেমতো নিজেদের নামের পাশে পদবি দিয়ে নগরজুড়ে পোস্টার লাগিয়ে রেখেছেন। অথচ কেন্দ্র অনুমোদিত ওই ৫৭ জনের কমিটিতে তাদের নাম ছিল না। নগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের কমিটিতে যুক্ত করেছেন। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া মহানগর কমিটিতে কাউকে পদ দেওয়া যায় না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com