ধর্ষণের পর হত্যার দায় ‘জোর করে স্বীকার করানো’ সেই এসআই প্রত্যাহার

0

নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে তিন আসামির জবানবন্দি দেয়ার দেড় মাস পর কথিত মৃত কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুনকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজ) করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা এই মামলার রহস্য উদঘাটনে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ ও বিতর্কিত জবানবন্দি আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠায় মঙ্গলবার রাতেই তাকে ক্লোজ করা হয়। পাশাপাশি এ ঘটনায় গঠিত দুইটি কমিটি তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার সকালে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীর বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং তাদের বর্তমান পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেন। পাশাপাশি তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়াসহ আসামিদের পরিবারকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদানের অভিযোগ করছেন স্বজনরা। এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি খলিল মাঝির পরিবারকে টাকা ফেরত দেয়াসহ অন্য দুই আসামি আবদুল্লাহ ও রাকিবের পরিবারকেও ফেরত দেয়ার জন্য ফোন করে যোগাযোগ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম আল মামুন। এতে করে তিনি আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিলেন সেটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা। তবে টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আসামিদের আরো ৪/৫টি মামলায় জড়িয়ে দেয়াসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জিসা মনি ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়া আসামি নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশ আমার স্বামীকে অমানুষিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে মারধর করবে না এই শর্তে শামীম স্যার আমার কাছে বিশ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি তাকে ছয় হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি স্বামীকে যাতে রিমান্ডে মারধর না করে। তারপরেও আমার স্বামীকে মেরে ও নির্যাতন করে মিথ্যা জবানবন্দি নিয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইল ফোনে তাকে ডেকে নিয়ে ঘুষের ছয় হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন এস আই শামীম। তিনি দাবি করেন, স্বামীর আয়ের উপরও তার সংসার চলতো। স্বামী মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকায় তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আসামি আবদুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন জানান, এস আই শামীমকে তিনি সাত হাজার টাকা এবং তার স্ত্রী শিউলি বেগম তিন হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। এখন ফোন করে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এবং থানায় গিয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ হুমকি দিয়ে বলছে, “আব্দুল্লাহকে আরো ৪/৫টি মামলা দিয়ে আটকে রাখা হবে। এই মামলা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে আব্দুল্লার মতো তোকেও ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হবে”। পুলিশের ভয়ের কারণে তিনি এখন দোকান চালাতে পারছেন না এবং পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।

আসামি রাকিবের ভাই রাজিব অভিযোগ করেন, ২৩ আগস্ট জিসা মনি উদ্ধারের এক ঘণ্টা আগে এসআই শামীম তার কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এখন সেই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বারবার ফোন করে থানায় যেতে বলছেন এবং নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো: জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, দুইটি কমিটি স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে। কিশোরী অপহরণ মামলায় গ্রেফতার তিন আসামির জবানবন্দি ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখাসহ আসামিদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রত্যাহারকৃত সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীমের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে তার ব্যাপারে তদন্ত চলছে। 

পুলিশ সুপার আরো জানান, মামলাটি অপহরণ মামলা হিসেবেই রেকর্ড করা হয়েছিলো। যেহেতু জিসা মনির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি সে কারণে হত্যা মামলা হয়নি। সেই অপহরণ মামলাতেই তিন আসামি কারাগারে রয়েছে। তাদের জামিনের বিষয়টি আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। জিসা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ নদীতে বাসিয়ে দিয়েছে বলে তারা আদালতে কি কারণে এই জবানবন্দি দিয়েছে বিষয়টি রহস্যের সৃষ্টি করেছে। আমরা পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি ও নানাভাবে খতিয়ে দেখছি। আশা করি শীঘ্রই আমরা এই রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হবো। 

গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পনের বছর বয়সী কিশোরী জিসা মনি। পরে বাবা জাহাঙ্গীর হোসেনের দায়ের করা অপহরণ মামলায় একমাস পর একই এলাকার রকিব, আবদুল্লাহ ও খলিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ঘটনার দেড় মাস পর ওই কিশোরী রোববার পরিবারের কাছে ফিরে আসলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সোমবার দুইটি তদন্ত কমিটি গঠনসহ অভিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম আল মামুনকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে অন্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com