শুটিং ফেডারেশনের নামে অস্ত্র এনে বাইরে বিক্রি!
গুলশানে শুটিং ক্লাবে অবস্থিত শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে হরিলুট চলছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শুটিং ক্লাবে অস্ত্র সরবরাহের নামে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। ফেডারেশনের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার তহবিল লোপাট হয়েছে। শুটিং ফেডারেশনের নামে বিদেশ থেকে আনা আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো হদিস নেই। হিসাব নেই গুলিরও। এসব দুর্নীতি তদন্ত করতে শুটিং ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য হোসনে আরা বেগমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় পাঁচ মাস ধরে এই কমিটি তদন্ত শেষে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে।
তদন্ত কমিটি বিগত ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুটিং ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড, আয়-ব্যয়, অস্ত্র-গুলি ক্রয়সহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে প্রায় ১০ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে। ২০১৬ সালে গুলশানে শুটিং ফেডারেশনে ১০টি ১০ মিটার রেঞ্জের ইলেকট্রনিক্স টার্গেট চেঞ্জার স্থাপন করা হয়। ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি টার্গেট চেঞ্জার স্থাপনে ২৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা নিয়ে নেয়। তদন্ত কমিটি আরো জানায়, একই সময় সেনাবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শুটিং ফেডারেশন ৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা করে ১০টি টার্গেট চেঞ্জার স্থাপন করে। ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে শুটিং ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার লাভবান হয়েছেন।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, জাতীয় শুটাররা বিদেশ থেকে দেশের ফেরার পথে তাদের ব্যবহূত অস্ত্রের সঙ্গে নতুন অস্ত্র ক্রয় করে আনেন। এসব অস্ত্র শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয় এবং পরবর্তীতে এসব অস্ত্র অন্যের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণকারী শুটারবৃন্দ দেশে ফেরার সময় ওয়ালথার কোম্পানির এলজি ৪০০ মডেলের কেবিএ ৫৭৯৯, কেবিএ ২৭৩২, কেবিএ ২২৩৪ ও কেবিএ ৮৫৯১ সিরিয়ালের ৪টি এয়ার রাইফেল দেশে আনে। এছাড়া গত বছর অনুষ্ঠিত সুজুকি নবম ন্যাশনাল এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ শেষে শুটারবৃন্দ দেশে ফেরার সময় ৪টি এয়ার রাইফেল দেশে আনে। এই আটটি এয়ার রাইফেলের তথ্য শুটিং ফেডারেশনের নথিতে নেই। এসব আগ্নেয়াস্ত্র আনার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ভবিষ্যতে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে পারে।
শুটিং ফেডারেশনের অস্ত্রের গুদামের রেজিস্টার বই ও অস্ত্র-গুলি তল্লাশি করে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। রেজিস্টার বইয়ে ১ হাজার ১২৮টি লাপুয়া সুপার গুলি রহস্যজনকভাবে অতিরিক্ত হিসাব দেখানো হয়েছে। গুদামের স্টক রেজিস্টার বইয়ে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ ১২ বোরের ৪০টি গুলি বিক্রি দেখানো হয়েছে। এই গুলি বিক্রির কোনো রশিদ স্টক রেজিস্টার বইয়ে লিপিবদ্ধ নাই। ২০১৭ সালের রেজিস্টার বই অনুযায়ী আর সিও স্পেশাল ৩৩ গ্রাম ওজনের ২০টি ও আর সিও স্পেশাল ৪২ গ্রাম ওজনের ৭৫টি গুলির হিসাব নাই। তদন্ত কমিটি গুদামের স্টক রেজিস্টার বইয়ে অস্ত্র ও গুলির হিসাবে নয়ছয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে।
এসব বিষয়ে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট তার কাছে জমা দিয়েছে। রিপোর্টটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অস্ত্র ও গুলির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি মন্ত্রণালয় রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।