ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৯ লাখ টাকা নিলেন এসআই!

0

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মাদক মামলার এক আসামি সুজিত কুমার ভদ্রের কাছ থেকে ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআই এর বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে এবং তাকে সহযোগিতা করায় এএসআই আতাউল গনির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। 

অভিযুক্ত এসআই সেলিম রেজাকে পঞ্চগড় জেলায় বদলী করা হয়েছে। তবে তিনি বর্তমান কর্মস্থল আদিতমারী থানা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছেন বলে জানান আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। 

ছুটি থেকে ফিরে তিনি নতুন কর্মস্থল পঞ্চগড় যাবেন বলেও জানান তিনি। 

তিনি বেলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় এসআই সেলিমের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। 

ওসি বলেন, সুজিত কুমার ভদ্র চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দুটি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করলে এসআই সেলিমকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন পুলিশ সুপার। 

জানা যায়, এরপর অভিযোগ তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় সদর সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিকুল ইসলামকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। এরপরই এসআই সেলিম রেজা ও এএসআই আতাউল গনি প্রধানের নামে ১৬ জুন দুটি বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। বিভাগীয় মামলা দুটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) আতিকুল হক।

মাদক মামলার আসামি সুজিত কুমার ভদ্র (৪৪) বলেন, আমি শহরের গোশালা বাজারে মাছের আড়তের ব্যবসা করি। জীবনের ভয়ে আমি এসআই সেলিমকে টাকা দিয়ে দিই। এরপরও এসআই সেলিম টাকা নেয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। 

বাধ্য হয়েই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি। 

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এসআই সেলিম ও এএসআই আতাউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর থেকে তাকে ও ঘটনার সাক্ষীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। 

হুমকির বিষয়টি নিয়ে ২১ জুলাই রংপুর ডিআইজি’র কাছে নিরাপত্তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

তিনি আরো বলেন, ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট সদর থানায় কর্মরত অবস্থায় এসআই সেলিম রেজা দুই দফায় তার কাছ থেকে ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা আদায় করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সেলিম রেজার সোর্স আবুল কালাম ও এএসআই আতাউল গনি। এএসআই আতাউল গনি বর্তমানে লালমনিরহাট সদর থানায় কর্মরত আছেন।

অভিযোগকারী সুজিত কুমার ভদ্র তার অভিযোগে নিজের পরিচয় উল্ল্যেখ করেছেন মাছ ও পরিবহন ব্যবসায়ী হিসেবে। 

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শহরের গোশলা বাজারে সুজিতের রয়েছে ইলিশসহ অন্য মাছের আড়ত। এ ছাড়া তার ২টি ছোট পিকআপ ও একটি ট্রাকও আছে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সুজিতের নামে এর আগে লালমনিরহাট সদর থানায় মাদক আইনে তিনটি এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের হয়েছিল। প্রত্যেকটি মামলায় সুজিতকে পলাতক আসামি দেখানো হয়েছিল এবং তার মধ্যে লালমনিরহাট সদর থানার তিন মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সুজিতের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করলে আদালত তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন। অন্য দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানার মামলায় পুলিশ চার্জশিট দেয় এবং আদালত সেই চার্জশিট গ্রহণ করলেও সুজিতকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

পুলিশের এসআই সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সুজিত কুমার ভদ্র একজন চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি চক্রের প্রধান হোতা। তার বিরুদ্ধে লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন থানায় ১০টি মাদকের মামলা রয়েছে। সুজিতের মাদকদ্রব্য চোরাচালানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে জানান তিনি। 

তবে এএসআই আতাউল গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, অপরাধী যে-ই হোক অপরাধের ধরণ অনুযায়ী তিনি শাস্তি পাবেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com