রুটিন বাজেট থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ
হ্যাঁ জয়যুক্তের রুটিন বাজেট থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের মতামত আমলে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি অর্থবহ বাজেটের জন্য ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব- এ তিনটি খাত সংস্কারে সুুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (২০ জুন) ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সাবেক গভর্নর এ পরামর্শ দেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় বাজেটের ভালো এবং মন্দ দিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রস্তাবিত বাজেট পরিবর্তনের এখনও সময় আছে জানিয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবারের বাজেট যেন রুটিনের হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে এ বাজেট না হয়। যা প্রস্তাব করা হলো তাই পাস হলো সেটা যেন না হয়। বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পরামর্শ মতামত দিচ্ছেন; এগুলো যেন যোগ করা হয়।
বাজেটকে বাস্তবসম্মত করার দাবি জানিয়ে এ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, বাজেট যেন জনবান্ধবমুখী হয়। সাধারণ মানুষ যেন উপকার পায়। কারণ ইতোমধ্যে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এর কারণে দেশের রফতানি, রেমিট্যান্স কমে যাওয়াসহ বেশিরভাগ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংক পুঁজিবাজারসহ দেশের আর্থিক খাতের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এ সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান সংকট মোকাবিলায় ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব- এ তিনটি খাতের সংস্কারের প্রস্তাব থাকা দরকার।
তিনি বলেন, সাধারণত সবসময় রুটিন বাজেট হয়ে থাকে। তবে এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রম হবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে তা দেখিনি। আয় আর ব্যয় নির্ধারণের এই বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
অর্থনীতি বিশ্লেষক সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা উচিত ছিল। সেটা এক বছর হোক অথবা বেশি হোক এমন কিছু সংস্কারে প্রস্তাব থাকা দরকার ছিল। বিশেষ করে ব্যাংক সেক্টরে বা আর্থিক খাতের বিষয়। আমাদের মন্দ ঋণ বেড়ে গেছে এটি কীভাবে আদায় করা যায়। ব্যাংকের পর্ষদগুলো সঠিক পরিচালনা, এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি কমানোসহ বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব। সরকার যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার বেশিরভাগ ব্যাংক ঋণনির্ভর। এটি বাস্তবায়নে প্রস্তাব রাখা।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক খাতের যে সংস্কারের কথা বলেছেন তার সমালোচনা করে অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আমরা সংস্কার করেছি ২% ডাউন পেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ করে দিয়েছি। এটা সংস্কার নয় এটা আরও পেছনে ঠেলে দেয়া।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে কিছু সংস্কার করবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু বলা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসবে। এটা তো রুটিন কথা। সবসময় বলে থাকে। উল্টো তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে ট্যাক্সের ব্যবধান কমে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাজেটের বড় অর্থসংস্থান করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাই বাজেটে এনবিআরের সংস্কারের একটা নির্দেশনা থাকা দরকার ছিল। কীভাবে এত বড় কর আসবে। আমরা বহুদিন ধরে শুনে আসছি করদাতা বাড়াতে বিভিন্ন সার্ভে করছে। কিন্তু নতুন করে মানুষকে করের আওতায় কীভাবে আনবে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন ছিল। এসব বিষয়ে সংস্কার করা সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকলে বাজারটা অর্থবহ হতো জানান এ অর্থনীতি বিশ্লেষক।
সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা ঠিক নয় উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে অধিক ঋণ না নিয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ নিতে পারে। তবে সেই ঋণের সুদহার ২/৩ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ৭/৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিলে ব্যাংকগুলো চাপে পড়বে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এত বড় বাজেট না রেখে তা কমিয়ে ওই অর্থ দিয়ে কোভিড-১৯ এ চলমান পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যয় করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যেসব প্রকল্প কর্মসংস্থান ও সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে এগুলো জোর দেয়া দারকার।