’বাঁচতে হলে প্রয়োজন সত্যিকারের লকডাউন, সুস্থ রাখতে হবে নিজেকে এবং অন্যকেও’
আমাদের আশেপাশে অনেক পরিচিত মুখ আমরা চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলছি। আমরা অনেক গুণী মানুষকে হারিয়ে ফেলছি। যাদের অবদান এই সমাজে অনেক, তাদের কাছ থেকে হয়তো আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। আমরা আমাদের পরিবারের সম্বলকে হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত। তাইতো আজ সবাই নেমে পরেছেন ভাইরাসের জেনম সিকুয়েন্স, বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনের ট্রায়াল বা নতুন নতুন ড্রাগ গবেষণাতে। কেউবা ভ্যাকসিনের পেছনে রাতদিন এক করে এগিয়ে চলছেন। আমরা যেন এক সুন্দর পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছি।
যিনি চলে যাচ্ছেন, তিনি হয়তো পৃথিবীর কাছে একটি সংখ্যা মাত্র; তবে তিনি তার পরিবার বা প্রিয়জনের কাছে কিন্তু একটি পৃথিবী।
তবে বাস্তবতা হল ভাইরাস তার সংক্রমণ ছড়াবেই আর এর মাঝে মানুষও ভালো হয়ে উঠবে।
কারণ এই সংক্রমনের প্রক্রিয়াটা সব সময় উঠানামা করে, যা নির্ভর করে আমাদের সকলের উপর। এই জন্য এটা কোনভাবেই বলা সম্ভব না যে, এটা কতদূর পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া অব্যহত রাখবে। এটা সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। কারণ এই ভাইরাস এর আক্রান্তের হার হল R0 = ২+ তাই যতো তাড়াতাড়ি একে সীমিত করা যাবে, ততো আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হবো। আবার প্রতিষেধক হিসেবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, একে অনেক ক্ষেত্রেই আটকে দেবে। তাই আমাদের বিশ্বাস লক ডাউন, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, হাত-মুখ ধোয়া, চোখকে সংক্রামণ থেকে বাঁচিয়ে রাখা- এই ধাপগুলো যদি আমরা মেনে চলি, অনেক ক্ষেত্রেই এর সংক্রমণ থেকে আমরা নিজেদের ও আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো।
এর ইনকিউবিসন এর সময় ২-১৪ দিন। মানে এর মাঝে এই ভাইরাস তার সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এর মাঝে উপসর্গ দেখা না গেলেও, তা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। আর সেক্ষেত্রে যিনি এর জীবাণু বহন করছেন, তার অজান্তেই তা সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে।
প্রতিদিন যেসব মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন, সাথে সাথে তারা তাদের আশেপাশের মানুষের জন্য একটি দেয়াল তৈরি করে চলেছেন। তাদের দ্বারা অন্যের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাচ্ছে। কিছুটা হার্ড ইমিউনিটি এর মত। যদিও এটা হার্ড ইমিউনিটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অনেক কম। তবুও আশা, হয়তো এভাবে মিউটেশন এর জন্য কার্যকারিতা কমেও যেতে পারে।
বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে এখনো কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে- যিনি একবার আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি দ্বিতীয়বার পুনরায় এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেন। শরীরে কতোভাগ এন্টিবডি থাকলে আবার সংক্রমণ হবে না, বা কতদিন পর্যন্ত এই এন্টিবডি শরীরে থাকবে- তাও সুস্পষ্ট নয়? হয়তো ছয় মাস বা এক বছর বা তারও কম। হয়তো এটা সিজনাল ফ্লু তে পরিণত হবে, যা নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হতে পারে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পাওয়া একটা তথ্যে দেখা গিয়েছে, যে আগে একবার ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল, আবারও সে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা থেকে গেলেও তার হার কম। আর তাদের শরীরে যে ভাইরাস পাওয়া গেছে তা বাহিরের আবরণ (প্রোটিন) আর এন এ (RNA)। সেই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তা মানবদেহে ক্ষতিকারক হিসেবে প্রকাশ পায় নি। গবেষকেরা এখনো এই তথ্যের উপর পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপসর্গ বিহীন মানুষ, যারা কখনোই পরীক্ষার আওতায় আসবে না বা আসে না, তারা সাধারণত এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। তবে এ জন্য সবাইকে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিৎ। তবে আমার মতে সবার জন্য ফ্লু এর মত কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে, যে স্বাস্থ্য গাইডলাইন আছে, তা মেনে চলা উচিত।
আমরা সবাই এখন স্বাস্থ্য সচেতন। তাই বাসাতেই চিকিৎসা করানো সবচেয়ে ভাল। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তবে সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই।
চিন্তা মুক্ত থাকুন। কারণ চিন্তা থেকে আমাদের প্যানিক এ্যটাকের সম্ভাবনা বেশী, যাতে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। আর মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। তাই চিন্তা মুক্ত থাকাই সবার জন্য ভালো।
অনেক দেশে যেমন ইটালি, স্পেন, জার্মানি, ঠিকমত লকডাউন করতে পেরেছিল বলেই, এখন লকডাউন খুলে দেবার পর তাদের সংক্রমণের হার কমে গিয়েছে। আমরাও যদি সত্যিকারের লকডাউন সবাই মিলে পালন করতে পারি, আমরাও ওই জায়গায় পৌঁছতে পারব। তবে এক্ষেত্রে অনেক বড় বড় প্রশ্ন সবার কাছেই দৃশ্যমান। যার উত্তর হয়তো সবার জানা নাও থাকতে পারে।
করোনাভাইরাস কে নিয়েই হয়তো অনেকদিন চলতে হতে পারে। তাই এখন থেকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া ভালো। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে আমাদের হয়ত্যো দুই বছরও চলতে হতে পারে, যা স্প্যানিশ ফ্লু এর মতো। হঠাৎ করেই হয়তো এই ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। ততোদিন পর্যন্ত প্রার্থনা, আমরা সবাই ভালো থাকি ও সুস্থ থাকি। অন্যকেও সুস্থ রাখি। মনে রাখবেন, এই ভাইরাস থেকে ভালো থাকতে হলে নিজে ভালো থাকলেই চলবে না, অন্যকেও ভালো রাখতে হবে। সবাইকে বুঝতে এবং বুঝাতে হবে।
অনুলিখন তারিক চয়ন