মুন্সীগঞ্জে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ
মুন্সীগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গণপরিবহনে যাতায়াতের কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
জেলাজুড়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গণপরিবহন এবং হাটবাজারগুলোতে এখনও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
দিন দিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে করে জেলাটি রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মুন্সীগঞ্জে দীর্ঘ আড়াই মাস অঘোষিত লকডাউন চললেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি না হওয়ায় এবং বেপরোয়া চলাফেরা করায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না।
শহরের রাস্তায় সিএনজি, অটোরিকশা ও মিশুকসহ অন্যসব পরিবহনই চলছে। বেশি চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক।
ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের যাতায়াতের অবলম্বন এখন সিএনজি আর অটোরিকশাসহ নানা ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু করোনারোধে এসব যানবাহনে নেই জীবাণুনাশকের কোনো ব্যবস্থা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিসহ হালকা যানবাহনে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। একত্রে গাদাগাদি করে এসব পরিবহনে উঠছেন যাত্রীরা।
অনেক যাত্রী ও পথচারীদের নেই মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম। অন্যদিকে লঞ্চঘাট এবং শহরের ব্যাংকপাড়ায় গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়। সেখানেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বয়স্ক ও বিধবাভাতা নিতে ব্যাংকের সামনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই দীর্ঘলাইন ধরতে দেখা গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য যাতায়াত করছেন সিএনজি, ইজিবাইক ও মিশুকে। এখন প্রশ্ন উঠেছে– কতটা ঝুঁকিমুক্ত এসব বাহন? যাত্রীরা বলছেন, সংক্রমণের ঝুঁকি জেনেও এসব বাহনে চড়তে বাধ্য তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, শহরের রাস্তায় মানুষ সিএনজি এবং অটোরিকশায় যেভাবে চলাচল করছে, তাতে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।
একাধিক যাত্রী জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই তারা অটো মিশুকে যাতায়াত করছেন। তবে এসব গণপরিবহনে যাত্রী উঠানোর আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করলে করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে।
যাত্রীদের সুরক্ষায় করোনা সংক্রমণ রোধে এখনই পরিবহনগুলোতে জীবাণুনাশক রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন তারা।
ব্যাটারিচালিত একাধিক মিশুক ও ইজিবাইকচালক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে¬– মিশুকে একজন এবং সিএনজিতে দুই-তিনজনের অধিক যাত্রী নেয়া যাবে না।
তবে যাত্রীরা আগের ভাড়া দিচ্ছেন। এ কারণে তারা বেশি ভাড়ার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছেন।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমানে জেলাটি করোনা সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। মুন্সীগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যে কোনো পরিবহনে যাত্রী কিংবা চালক সবাইকেই মাস্ক পরতে হবে।
প্রতিটা গণপরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। একটি গাড়িতে সারাদিন অনেক যাত্রী উঠানামা করেন। যাত্রীদের পরিহিত কাপড়ের মাধ্যমে জীবাণু লেগে থাকতে পারে। তাই যেখানে যাত্রী বসবে সেই জায়গাটা স্প্রে করতে হবে। যাত্রী নেমে গেলে ওই জায়গাটা আরও স্প্রে করতে হবে।
পাশাপাশি জায়গাটা ভালো করে মুছে দিতে হবে। এটি না করলে এই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিরাট ঝুঁকি থেকেই থাকে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহাম্মেদ জানান, গণপরিবহন চলাচলে আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গণপরিবহনগুলো যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে লক্ষ্যে গত কয়েক দিন ধরে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে অনেকেই বেশিসংখ্যক যাত্রী বহন করে থাকে। আমরা বিষয়টির ওপর দৃষ্টি রেখেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কার্যক্রম চলমান আছে। কেউ যদি সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী পরিবহন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।