সাধারণ ছুটি আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানোর পরামর্শ নাগরিক প্ল্যাটফর্মের

0

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারকে সাধারণ ছুটি আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বক্তারা। একইসঙ্গে জোন ভিত্তিক লকডাউন খুলে দিয়ে ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে রেড, গ্রিন ও ইয়েলো জোন করার ব্যবস্থা করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

সোমবার “সাধারণছুটি-পরবর্তীস্বাস্থ্যঝুঁকি” শীর্ষকএক ভার্চুয়াল সংলাপে দেশের স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ এসব পরামর্শ প্রদান করেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এই ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, দেশে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের মাঝে কোভিড-১৯ অতি মহামারির ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য উপকরণও সহজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ ছুটি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়া হলে জনগণের মাঝে রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে আরো দুই সপ্তাহ সাধারণ ছুটি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে পারে সরকার। এরপর সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা কমে এলে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা যেতে পারে।

ওয়াটার এইড-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. মো. খায়রুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সংলাপে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি প্ল্যাট ফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য এবং ব্র্যাক জেমস পিগ্র্যান্ট স্কুল অব পাবিলক হেলথ-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা (সিলেট বিভাগ) ডা. আবু জামিল ফয়সাল, আইসিডিডিআর,বি-এর মিউকোসাল ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি ইউনিটের প্রধান ডা. ফেরদৌসী কাদরি, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জন সংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. মোরশেদা চৌধুরী ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, চলমান অতি মহামারিতে নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলেও জনগণের স্বাস্থ্য সেবা ও জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছে। তবে সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি; নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে জনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ ছুটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।

সংসদ সদস্য অ্যারো মাদত্ত, এমপি, সংলাপে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, সরকারের ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারীতে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী খুবই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ মেয়াদি সহযোগিতা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয়ের অভাবকে অতি মহামারি মোকাবিলায় একটি বড় বাধা বলে চিহ্নিত করেন। সেই সঙ্গে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মত স্বাস্থ্য উপকরণ বিনা মূল্যে জনগণের মাঝে বিতরণের প্রস্তাব উঠে আসে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত সরকারকে সহায়তা করতে পারে। সংলাপের আলোচকগণ মনে করেন, জন সচেতনতা বৃদ্ধিতে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে আরো কঠোর ও কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও ত্রাণ কার্যক্রমের বিস্তৃতি বাড়াতে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করা জরুরি।

নারীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার পরামর্শ দিয়ে বক্তারা বলেন, গর্ভবতী মায়েদের টেস্টের আওতায় আনতে হবে। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর হোম ডেলিভারির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে মায়েদের মৃত্যু হার বাড়ছে। এর ফলে পরবর্তীতে ফিস্টুলা রোগে ভুগবেন তারা। সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া নারী গার্মেন্টস কর্মী এবং গ্রামের নারীদের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক কম। এদিকে মাত্র ৩৫ শতাংশ নারী মাস্ক ব্যবহার করছে। সেখানে পুরুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ। তাই নারীদের বেশি বেশি মাস্ক ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্বাস নিতে সুবিধা হয় এমন মাস্ক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন তারা।

ভ্যাকসিন হাতে পেলে তা ব্যবহারের প্রস্তুতি গ্রহণ, রিচার্জ করে হাই ইমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট করা, গ্রামে গ্রামে করোনা কমিটি তৈরি, শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকি, সচেতনতা বৃদ্ধি, সাইন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ তৈরির দিকেও আলোকপাত করেন তারা।

এই ভার্চুয়াল সংলাপে বরগুনা, গাইবান্ধা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্মী, উন্নয়ন কর্মী, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাংবাদিকবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com