সেই কাউন্সিলর খোরশেদ স্ত্রীসহ হাসপাতালে ভর্তি
নারায়ণগঞ্জে করোনাসহ উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৬১ জনের মরদেহ দাফন করে দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার (৩০মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের মাসদাইর বাসা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ কাঁচপুরে অবস্থিত সাজেদা হাসপাতালে খোরশেদ দম্পত্তিকে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, গত ২৩ মে লুনা আক্রান্তের পর বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে, শনিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় লুনার। তিনি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
করোনাযোদ্ধা কাউন্সিলর খোরশেদ শনিবার মধ্যরাতে সাজেদা হাসপাতালে পৌছার পর জানান, লুনার নাকে অক্সিজেন লাগানো হয়েছে। তার পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। একটু দোয়া করেন সবাই প্লিজ।
তিনি বলেন, আমি নিজেও এখন করোনায় আক্রান্ত। আমার করোনা পজেটিভ আসার খবর পাওয়ার পর আমার স্ত্রী লুনা আরও ভেঙে পড়েছে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আক্রান্তদের সেবা এবং করোনা আক্রান্তসহ উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৬১ জনের মরদেহ দাফন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। শনিবার তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
তারপরও করোনা আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে গেছেন।
জানা যায়, করোনার শুরু থেকেই কাউন্সিলর খোরশেদ নিজ উদ্যোগে তার ওয়ার্ডের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেন। মানুষকে সচেতন করেন। আর দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংকট হওয়ার পর নিজেই হাজার হাজার বোতল স্যানিটাইজার তৈরি করে মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও করোনা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এলাকায় এলাকায়, সড়কে সড়কে, মানুষের ঘরে ঘরে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন খোরশেদ। যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে এখনও জীবাণুনাশক স্প্রে করা অব্যাহত রেখেছেন। মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত প্রতি এলাকায় মাইকিং করাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে টিম গঠন করে এলাকায় এলাকায় আড্ডা বন্ধ করতে মানুষকে অনুরোধ করছেন।
করোনায় মারা যাওয়ার পর ভয়ে মরদেহ ফেলে পরিবারের সদস্যরা যখন পালিয়ে যান ওই সময় খোরশেদ তার টিম নিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করেন। করোনার ভয়ে মানুষ যখন স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির মরদেহও ধরছে তখন খোরশেদ তার গঠিত টিম নিয়ে এগিয়ে যান। মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা করেন এবং দাফন সম্পন্ন করেন। ভয়কে জয় করে বীর বাহাদুর খ্যাতি অর্জন করেন কাউন্সিলর খোরশেদ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, আমার করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিজেই তাকে নিয়ে সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসছি। আমার স্ত্রীর জ্বর, ঠান্ডা, গলা ব্যথাসহ করোনার বেশ কয়েকটি উপসর্গ আছে। এখনও তেমনভাবে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়নি। তবে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া সে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আইসিইউয়ের জন্য অনুরোধ করেছি। তারা রোববার সকালে ব্যবস্থা করবে বলেছে। একটি আইসিইউ হলে হয়তো আমার স্ত্রীর শ্বাস নেয়াটা স্বাভাবিকভাবে চলতো।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের জন্য কাজ করতে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে গেলাম। প্রথমে আমার স্ত্রী, এর সাতদিন পর আমার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। দেশবাসীর কাছে স্ত্রী ও নিজের সুস্থতা কামনায় দোয়া চান কাউন্সিলর খোরশেদ।