মাওলানা ভাসানীর আহবানে ফারাক্কা লংমার্চ
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী আজীবন নির্যাতিত, নিপীড়িত হতদরিদ্র গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনীতি ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণে। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার মানুষ ধীরে ধীরে পানি আগ্রাসনের স্বীকার হচ্ছে। তাই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের শুরুতেই তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। মজলুম জননেতার আহবানে ফারাক্কা লংমার্চ হয়েছিল। পানি বাংলাদেশের হীরণ ও মরণকাঠি। দেশের ৫৪টি নদীর উৎপত্তি পার্শ্ববর্তী অন্যদেশ। তাদের সাথে সমঝোতা ও সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক।
কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার নামে ভারত পঞ্চাশ দশকের দিকে গঙ্গার উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পানি বন্টনের বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু সমঝোতা হয়নি। ১৯৭৪ সাল থেকে ভারত পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে একচল্লিশ দিনের জন্য ফারাক্কা থেকে ফিডায় ক্যানেলে নদীর পানি নিতে আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী ভিত্তিতে পানি বন্টনের ব্যাপারে কোন সমঝোতা হয়নি। ফলে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে পরিবেশ, কৃষি, নাব্যতা ইত্যাদি সীমাহীন বিপর্যেয়ের সম্মুখীন।
এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে জাতি স্মরণ করছে শতাব্দীর দিশারী মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ১৯৭৬ সালের ১৭মে ফারাক্কা লংমার্চ। সে বছর ১৮ এপ্রিল অশীতিপয় জননেতা রোগ শয্যা থেকে উঠে ডাক দেন দেশের জনগণকে এবং তারা প্রবল ভাবে সাড়া দেন। ১৬ ও ১৭ই মে লাখ জনতার মিছিল রাজশাহী থেকে সীমান্তবর্তী কানসাট এ সম্মিলিত হয়।
সেখান থেকে বৃদ্ধ জননেতা আহবান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে, বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থা সরে জমিনে দেখতে আসেন। ফারাক্কা শুধু বাংলাদেশের জীবন সংকট নয়। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাভাবিক প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ককে বিপন্ন করছে। ভারতেও এই সত্যউচ্চকিত হচ্ছে যে, এই বাঁধ ভারত কে এক অপরাধী দেশের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে। ভাবাবেগ বা বিরোধী চেতনা আমাদের কারোর জন্য মঙ্গল জনক নয়। দু’ দেশের বিবেকবান মানুষ, সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিক, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবিরা এ ব্যাপারে সমাধানের পথ খুজে বের করবে। এ প্রত্যাশা উভয় দেশের মানুষের।
লেখক: মহাসচিব, মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন।