সামাজিক দূরত্বের সময় কীভাবে সুস্থ ও সংযুক্ত থাকবেন

0

করোনাভাইরাস মহামারী অব্যাহত থাকায় এবং বাংলাদেশে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়েই চলেছে, তাই নিজেকে, আমাদের পরিবার এবং আমাদের সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল ঘরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনুশীলন করা।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই হঠাৎ পরিবর্তন আমাদেরকে ভয়, হতাশা, উদ্বেগ বা একাকীত্বের মতো অনুভূতিগুলোর মধ্যে নিয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় সুস্থ ও একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা কিভাবে অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন কিছু পরামর্শ-

একটি দৈনিক রুটিন অনুসরণ করুন আপনি বাড়ি থেকে কাজ করছেন কিংবা আপনার হাতে অনেক সময় রয়েছে, আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনের একটি রুটিন অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় আমরা সহজেই আমাদের নিজস্ব সময়সূচি হারিয়ে ফেলতে পারি। বরাদ্দকৃত কাজের সময়কে চিহ্নিত করে আপনার নিজের এবং পরিবারের জন্য সময় আলাদা রাখুন।

যদি আপনি ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম না করে থাকেন এবং পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে, তাহলে আপনার দিনের অতিরিক্ত সময় বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দ করা উচিত- সেটা সিনেমা দেখা বা ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই হোক না কেন। উভয় ক্ষেত্রেই সুস্থ এবং ফিট থাকতে ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘরে বসে সময় কাটানো, যেমন বোর্ড গেম খেলা ইত্যাদির পাশাপাশি প্রতিদিনের রুটিনের একটি অংশহিসেবে ব্যায়াম বা ইওগা (yoga)কে সংযুক্ত করুন।

পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

এই লকডাউন চলাকালীন, বেশিরভাগ লোকেরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে সাধারণ সময় চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছি। যারা পরিবারের আশপাশে থাকেন না, তাদের জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করাটা উত্তম, এটা হতে পারে ফেসটাইম, হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও বা ফেসবুক মেসেঞ্জার- আপনার পরিবার যেটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একইভাবে, বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখুন।

এই কঠিন সময়ে একটি ফোন বা বন্ধুর কাছে একটি ভিডিও কল উভয়ের জন্য বিশাল সাপোর্ট হতে পারে এবং স্ট্রেস, একাকীত্ব বা কোনো উদ্বেগ অনুভূতি থেকেও মুক্তি পেতে পারেন- এবং এতে উভয় ভালো বোধ করবেন। অন্যদিকে, যেহেতু আমরা বাইরে যাচ্ছি না সেহেতু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রচুর সময় ব্যয় করাও বেশ স্বস্তিদায়ক হতে পারে। নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। সেটা আপনার বই পড়ার সময় হতে পারে, মেডিয়েট বা কেবল নিজের জন্য কিছুটা শান্ত সময় যার মাধ্যমে নির্জনে আরাম পাওয়া যেতে পারে।

নিজের অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলুন এবং সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করুন

সবাই তাদের অনুভূতি বা আবেগ সম্পর্কে কথা বলতে পছন্দ করে না, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে একা একাই সব সহ্য করা কঠিন হতে পারে। আপনার নিকটজনের সঙ্গে কথা বলুন – সে পরিবারের সদস্য অথবা একজন বন্ধুই হোক না কেন, এবং আপনি যা অনুভব করছেন বা যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা করুন।

এই সময়ে হতাশা এবং হতাশার অনুভূতি দেখা দেয়াটা স্বাভাবিক এবং এটি সম্পর্কে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারাটা আপনার জন্য অবিশ্বাস্যরকম সহায়ক হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন আপনার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অথবা সহায়তা প্রয়োজন, আপনি প্রাভা’র পরামর্শদাতা বা সাইকোথেরাপিস্টদের সঙ্গে ১০৬৪৮ নম্বরে কল করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারেন।

তারা আপনার সঙ্গে অনলাইনে কথা বলবেন এবং আপনার আনুভূতিকে ভালো করতে সহায়তা করবেন। যদি আপনি আপনার কর্মসংস্থান বা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তাহলে আপনার সেই বন্ধু বা পরামর্শদাতাদের সঙ্গে কথা বলুন, যাদেরকে আপনি মনে করেন যে, তারা আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে।

ইতিবাচক মনোভাব রাখুন কাউকে ইতিবাচক থাকার জন্য বলাটা সব সময়ই সহজ। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে আমাদের পক্ষে অসহায়ত্ব বোধ না করে ইতিবাচক থাকাটাই জরুরি। এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে আমাদেরকে মানসিকভাবে তৎপর হতে হবে।

আপনি যদি নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলতে বা কোনো সহায়তা চাইতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন সে ক্ষেত্রে আপনি যা অনুভব করছেন তা লিখে ফেলতে পারেন এবং কেবল আপনার জন্য একটি জার্নাল বানিয়ে রাখতে পারেন। আপনি যে অনুভূতিগুলো অনুভব করছেন তা স্বীকার ও গ্রহণ করে নেয়ার জন্য সর্বদা আপনার অভ্যন্তরীণ আত্মার সংস্পর্শে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

খবরের সীমাবদ্ধতা

আপনার চারপাশে এবং বিশ্বে কী ঘটছে তা জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই সময়ে খুব বেশি খবর ক্লান্তিকর হতে পারে। আপনি কতক্ষণ সংবাদ দেখেন বা পড়বেন তার একটা সীমা নির্ধারণের চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনার পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত সংবাদ দেখছেন- তারা টিভিতে সংবাদ দেখার জন্য কত ঘণ্টা ব্যয় করবেন তা সীমাবদ্ধ করার জন্য পরামর্শ দিন। এটি কেবল তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই মঙ্গলজনক নয় বরং আপনার জন্যও মঙ্গলজনক।

লেখক: ডা. সিমীন এম আক্তার

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com