‘বিশ্ব তাকিয়ে, এপ্রিলেই মিলবে গণস্বাস্থ্যের কিট’

0

করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে নিজেদের উদ্ভাবিত কিটের নমুনা এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের কাঁচামাল (রি-এজেন্ট) পেতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তারপরও সুলভমূল্যে করোনা সংক্রমণ সনাক্তকরণের যে কিট আমরা উদ্ভাবন করেছি সেটার কাজ চলছে। কাজের গতিও বেড়েছে। সারা বিশ্ব আমাদের সুলভমূল্যে কিট উদ্ভাবনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমরা হোপফুল স্টেইজে আছি।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করি, এপ্রিলের সেকেন্ড উইকের মধ্যে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কিটের স্যাম্পল জমা দিতে পারবো। সরকার ক্লিয়ারেন্স দিলে এপ্রিলেই উৎপাদিত কিট বাজারজাত করা সম্ভব হবে।’

কিন্তু গণস্বাস্থ্যের কিট উৎপাদনে বিলম্বের কারণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিস-ডিপার্টমেন্ট সব বন্ধ। তাই একটু সময় লাগছে। যুক্তরাজ্যে যে অর্ডার আমরা দিয়েছি তা এখনও এসে পৌঁছেনি। আমরা অলটারনেটিভ সোর্স থেকেও কাঁচামাল আনছি। চীনও এগ্রি করেছে কিট উৎপাদনের কাঁচামাল আমাদের দেবে। চীনের কাঁচামাল দিয়েই এখন আমাদের কাজ চলছে।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সুভলমূল্যে কিট দিতে পারবো। যা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ পরীক্ষা করতে পারবে। গোটা বিশ্ব আমাদের এই সুলভ মূল্যে কিট উদ্ভাবনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। এতটাই ব্যস্ত আছি, জবাবও দেয়ার সময় পাচ্ছি না। শুধু এটুকু বলি- আমরা হোপফুল।’

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে সহজ ও সুলভমূল্যের কিট উদ্ভাবনের দাবি জানিয়েছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

এর পর গত ১৯ মার্চ করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ কিট উৎপাদনে চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অনুমতি দেয় সরকার। 

ওইদিনই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমরা মাত্র কাঁচামাল আমদানি করার অনুমোদন পেয়েছি। আমরা প্রায় সাত দিন ধরে অনুমতির অপেক্ষায় ছিলাম। ভালো খবর যে আমরা অনুমতি পেয়েছি।’

বাজারে আসতে কতদিন সময় লাগবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা স্যাম্পল তৈরি করে ১৫ দিনের মধ্যে সরকারকে দেবো। সরকার যাচাই-বাছাই করে এক মাসের মধ্যে বাজারে ছাড়তে পারবে। সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স না ধরলে আমরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বাজারজাত করতে পারবো।’

এর আগে করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট আবিষ্কার করার দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আরএনএ বায়োটেক লিমিটেড। এ কিটটি বাজারজাত করার জন্য ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিদফতরের অনুমোদনের জন্য আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ জানান, ‘সিঙ্গাপুর এবং গণস্বাস্থ্যের একটি গবেষক দল মিলে এই আবিষ্কার করেছে। দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার কিটের যে সংকট আছে তা এই আবিষ্কারে দূর হবে বলে আমরা আশা করি।’

এরইমধ্যে গেল ১৮ মার্চ বুধবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফরহাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন ড. বিজন কুমার শীল। এই পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় মাত্র ১৫ মিনিটে করোনা সনাক্ত করা সম্ভব হবে। 

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেড কোভিড-১৯ শনাক্তে একটি কিট তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন একটি দল গত ফেব্রুয়ারি থেকে কিট তৈরি ও উৎপাদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. বিজন কুমার শীল। তিনি ২০০৩ সালে সার্স পিওসি কিট তৈরি করা দলের সদস্য ছিলেন। করোনার পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট ও সরঞ্জাম প্রস্তুতের শেষ ধাপে রয়েছে দলটি।

ড. বিজন কুমার সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুর ওপর গবেষণা করছিলেন। গত ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘করোনা ভাইরাস সার্সের রূপান্তরিত রূপ। এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। এটা নিয়ে এখন থেকেই আমাদের গবেষণা করা দরকার।’  কিন্তু তখন তার কথায় কেউ তেমন একটা কর্ণপাত করেনি। 

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। র‌্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবিলা করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com