করোনার ক্ষতি সামলে উঠতে বিশ্ব অর্থনীতির ‘বহু বছর লেগে যেতে পারে’
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর সময় লেগে যাবে। ওইসিডির মহাপরিচালক এঞ্জেল গুরিয়া বলেছেন এই মহামারি থেকে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তার থেকে বেশি বড় হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এর আকস্মিকতা।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন কেউ যদি ভাবে দেশগুলো দ্রুত তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলে উঠতে পারবে তাহলে সেটা হবে একটা “স্তোক বাক্য”। ওইসিডি সরকারগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন তাদের ব্যয় নীতি ভুলে গিয়ে দ্রুত ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এবং ভাইরাসের চিকিৎসার পেছনে মনোযোগ দেয়।করোনাভাইরাস গুরুতর আকারে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেক কমে তা ১.৫%-এ দাঁড়াবে বলে সম্প্রতি যে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল, গুরিয়া বলেছেন তাও এখন খুবই আশাবাদী একটা পূর্বাভাস বলেই মনে হচ্ছে। গুরিয়া বলছেন কত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন এবং কোম্পানিগুলোর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে বিভিন্ন দেশের জন্য এই ক্ষতি সামাল দিতে “বেশ অনেক বছর লেগে যাবে”।
তিনি বলেছেন আগামী কয়েক মাসে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। এবং আর্থিক ক্যালেন্ডারের পর পর দুটি কোয়ার্টার ধরে এই মন্দা চলতে থাকবে। “বিশ্বব্যাপী মন্দা যদি নাও হয়, তারপরেও বিশ্বের অনেক দেশে একেবারেই কোন প্রবৃদ্ধি হবে না অথবা কোন কোন দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে নিম্নমুখী, তিনি বলেন।
”এসব দেশের মধ্যে বড় বড় অর্থনীতির দেশও থাকবে। ফলে সার্বিকভাবে এবছর প্রবৃদ্ধি হবে নিম্নমুখী এবং প্রবৃদ্ধির হার আবার উর্ধ্বমুখী হতে অনেকদিন সময় লাগবে,” তিনি বলেন। গুরিয়া বলেছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যে বিরাট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা আমেরিকায় ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী বা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর অর্থবাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল এবারের আঘাত তার চেয়েও অনেক আকস্মিক।
তিনি বলেছেন: “এর কারণ হল এই প্রাদুর্ভাবের ফলে যে বেকারত্ব তৈরি হবে, তা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হবে তা আমরা জানি না। আসলে কত লোক যে বেকার হবেন, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়। আমাদের কাছে এটাও জানা নেই যে ছোট ও মাঝারি কত লাখ লাখ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ইতিমধ্যেই ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
বিভিন্ন দেশের সরকার ইতোমধ্যেই কর্মী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করার জন্য নজিরবিহীন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের নীতি নির্ধারকরা ঘোষণা করেছেন করোনা মহামারির কারণে যারা কাজে যেতে পারছেন না সরকার তাদের বেতনের একটা বড় অঙ্ক সরকারি কোষাগার থেকে দেবে।
গুরিয়া সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ ঋণ নেবার তাদের যেসব নীতিমালা আছে, সব “ছুঁড়ে ফেলে দিন এবং এই সংকট মোকাবেলা করুন।” অবশ্য তিনি এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যে ঋণ সংকটে জর্জরিত দেশগুলোর জন্য আরও ঋণের বোঝা এবং আরও ব্যয় ঘাটতি তাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক সংকট তৈরি করবে।
গুরিয়া বলছেন ধনী দেশগুলোর জোট জি-টোয়েন্টির নীতি নির্ধারকরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও মনে করছিলেন যে এই সংকট থেকে উত্তরণ অনেকটা ইংরেজি V অক্ষরের মত হবে, অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হঠাৎ করে এক ধাক্কায় ধসে পড়বে, কিন্তু তা দ্রুত আবার এক লাফে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
“আমি বলব তখনও সেটা খুবই আশাবাদী একটা ধারণা ছিল,” তিনি বলেন। “আমি ওই ‘ভি’ অক্ষরের মত কোন প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত নই। আমরা এখন এ বিষয়ে নিশ্চিত যে এটা কখনই ‘ভি’ অক্ষরের মত কাজ করবে না। আমার মনে হয় এটা ইংরেজি ‘U’ এর মত দাঁড়াবে। অর্থাৎ অর্থনীতির ধস নিচের তলায় থাকবে বেশ লম্বা সময় ধরে,” তিনি বলেন।
”তারপর এর থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে আমার বক্তব্য হল এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে এটা ইংরেজি L অক্ষরের মত দাঁড়িয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ এর থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব হবে,” তিনি বলেন। ওইসিডি বলছে এই করোনা মহামারি মোকাবেলার জন্য চার স্তরে পরিকল্পনা নিতে হবে।
•বিনা খরচে সংক্রমণ পরীক্ষার ব্যবস্থা
•ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য ভাল সরঞ্জামের ব্যবস্থা
•যারা নিজেরা কাজ করেন তাদের সহ কর্মীদের বেতন বাবদ নগদ অর্থের ব্যবস্থা এবং
•ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে সময় ছাড় দেয়া।
গুরিয়া বলেছেন এই পরিকল্পনা সরকারগুলোকে নিতে হবে ঠিক যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইউরোপের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল সেই পর্যায়ে।