ভারতের কারাগারে করোনা আতঙ্ক, পুলিশের গুলিতে নিহত ১
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাস ইস্যুতে রাজ্যের দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে পুলিশের গুলিতে বিচারাধীন এক বন্দী নিহত হয়েছেন। শনিবার দেশটির গণমাধ্যম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যারাকপুর নগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এক জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। তবে গুলিবিদ্ধ হয়েই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কি না বলতে পারছি না।’
এ দিকে পুলিশ ও জেলরক্ষীদের গুলিতেই ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে পরিবার পরিজনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এতে কমপক্ষে আরো ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং আহত অবস্থায় জেল থেকে ৯ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, করোনা আতঙ্কের জেরে শনিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। এসময় জেলের একটা বড় অংশের দখল নিয়ে নেয় বন্দীরা। জেলের ভেতরে আগুন লাগানোর পাশাপাশি মই এনে পাঁচিল টপকানোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ। শেষ পর্যন্ত কেউ পালিয়েছেন কি তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ ও কারাকর্মীদের একটা অংশকে সাজাপ্রাপ্তদের ওয়ার্ডে গিয়ে লুকোতে হয়েছে। জেলের যে অংশের দখল নিয়েছেন বন্দীরা, সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হচ্ছে বাইরে থেকে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, পুলিশকে শূন্যে গুলি চালানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে জেলবন্দীরা যাতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না পড়েন, সে জন্য সাময়িকভাবে পরিবারের লোকজনের সাথে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য কারা দফতর।
শুক্রবারের ওই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই এ দিন সকালে সংঘর্ষ শুরু হয়। জেল সূত্রের খবর, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মূলত বিচারাধীন বন্দিরাই থাকেন। পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ বন্ধের প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তারা। জেল সুপার নিজে বিক্ষোভ থামাতে গেলে, তার সামনে একাধিক দাবি নিয়ে হাজির হন বন্দীরা। বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের মতো তাদেরও প্যারোলে ছাড়তে হবে।
এ নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ এবং বন্দীদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা সংঘর্ষের আকার নেয়। অভিযোগ, ওই সংঘর্ষ চলাকালীন জেল পুলিশ এবং বাইরে থেকে র্যাফ এসে ওয়ার্ডের মধ্যেই বিচারাধীন বন্দিদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। তার পাল্টা ওয়ার্ডে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ বন্দীরা। সেইসময় বিক্ষুব্ধ বিচারাধীন বন্দীরা ওয়ার্ডের গেট ভেঙে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। তারা দা ও কুঠারের মতো অস্ত্রও হাতে তুলে নিয়েছেন বলে জেল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন। এ সময় জেলের ওয়ার্ডে আগুনও ধরিয়ে দেয় বন্দীরা।
কারাকর্তৃপক্ষ গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয়। অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারাও জেলে পৌঁছেছেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা অন্য ওয়ার্ডে রয়েছেন। তাদের কেউ এই সংঘর্ষে যোগ দেননি।
অপর দিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন বন্দীরা।