মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও করোনা ভাইরাসকে একসঙ্গে মোকাবিলা করছে ইরান
ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে ইরানে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার। প্রাণ হারিয়েছেন ১২৮৪ জন। করোনার সংক্রমণ থামাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের দেশগুলো। বিপর্যস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। এরইমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কীভাবে মোকাবেলা করছে দেশটি। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পার্সটুডে।
এতে উঠে এসেছে, কীভাবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানিতে সহযোগিতার দায়ে ইরানের পাঁচ পরমাণু বিজ্ঞানী ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য-কর্তৃপক্ষ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, ইরানের পেট্রোক্যামিকেল খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেনে জড়িত থাকায় দেশটির তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ওয়াশিংটন কালো-তালিকাভুক্ত করেছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একটি সামাজিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও এর পরিচালকরাও কালো-তালিকার মধ্যে পড়েছে বলে পম্পেও জানান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে এ নিষেধাজ্ঞা দিল। পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েই চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রীসহ মানবিক অতি গুরুত্বপূর্ণ বহু পণ্য এসব নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে। ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসা সংকটে ভুগছে এবং এ পর্যন্ত বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
স্পেনে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হাসান কাশকাভি বলেছেন, ‘ইরান একমাত্র দেশ যাকে এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ও অর্থলেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে চিকিৎসা খাতে জরুরি পণ্য আনতে পারছে না ইরান।’ তবে আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা বলছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান করোনা ভাইরাস মোকাবেলার বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণের বিরোধিতা করেছেন। এদিকে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্বেও সব দিক থেকে ইরানকে পংগু করে ফেলার মার্কিন চেষ্টা থেমে নেই বরং তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা মোকাবেলাসহ চিকিৎসা খাতে ইরান যাতে কোনো সুবিধা করতে না পারে সেজন্য বিদেশ থেকে যে কোনো ওষুধ আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইরানকে নতজানু করতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। মার্কিন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ পল পিলার ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির মার্কিন নীতির ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যারা ইরানের ওপর প্রচন্ড- চাপ সৃষ্টির পক্ষপাতী তারাও এ ক্ষেত্রে মার্কিন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ওয়াশিংটনের বিদ্বেষী পদক্ষেপ সত্বেও ইরান বহুবার বলেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তারা আত্মসমর্পণ করবে না।