বিন সালমান লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন?
একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে সৌদি আরবে। বিশেষ করে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্সকে আটকের ঘটনা সারা দুনিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। যেসব প্রিন্সকে আটক করা হয়েছে, তারা কি পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন? এমন প্রশ্ন এখন ওঠতে শুরু করেছ।
প্রিন্স বিন সালমান জানতেন, প্রিন্স আহমদ লন্ডনে নিজের বাড়ি ছাড়ার আগে এমআই এবং সিআইএর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন, দেশে ফিরে যাওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হবে না। এ বিষয়টি অমান্য করার ক্ষেত্রে এমবিএস অর্থাৎ সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের ওপর ভরসা করছেন। বিন সালমানের আরেক ভরসাস্থল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছেন। আমেরিকান ডিপ স্টেটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফিরে আসছেন না।
যদি এমন হয়, ট্রাম্প এবং কুশনার দু’জনেই নভেম্বরের পরে হোয়াইট হাউজে আর না থাকেন, তাহলে কী হবে? ডেমোক্র্যাট সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের সমর্থনপুষ্ট, ঘোষিত জায়নবাদী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে বিন সালমানের ব্যাপারে ভিন্ন ধারণা থাকা জো বাইডেনের কাছ থেকে কী আশা করবেন এমবিএস?
মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বহুলপ্রতীক্ষিত পরিবর্তন করেই ফেলবেন, তা কেউ প্রত্যাশা করছেন না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, কোনো কিছুই পরিবর্তিত হবে না। ট্রাম্পের বিদেশী মিত্রদের ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক উন্মোচনের বিষয়ে বাইডেনের ব্যক্তিগত আগ্রহ থাকবে। আর তাদের মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমান হতে পারেন অন্যতম। আমেরিকা সৌদি রাজতন্ত্রের পেছনে থাকতে পারে; তবে নতুন বাদশাহ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বল্প গ্রহণযোগ্য বিন সালমানকে সমর্থন না-ও করতে পারে।
আর সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন নায়েফের মতো সিআইএর পরিচিত মিত্র আবার সামনে চলে আসতে পারেন। এমবিএস এই ঝুঁকিটিকে গ্রেফতার বা বিচারের মাধ্যমে মুছে দিতে চাইছেন বলে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বিন সালমানের জন্য এটি এক বিশাল জুয়ার মতো হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসকে সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে ট্রাম্পের মতো করে অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন না- সেটিই স্বাভাবিক হতে পারে।
আর যেখানে রাশিয়া, চীন, ইরান এবং তুরস্কের বিপরীতে মার্কিন সেনা আশ্রয়ে সৌদি রাজতন্ত্র অনেকখানি টিকে থাকছে, সেখানে আমেরিকার হিসাব-নিকাশের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ডেভিড হার্স্টের মতে, স্বল্প-দীর্ঘ কেরিয়ারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বর্তমান কার্যক্রম সবচেয়ে বড় জুয়া খেলা হয়ে যাচ্ছে। আসল সমস্যাটি হলো, বিন সালমান এবং তার পরামর্শদাতারা বোধহয় নিজের ভুলটি অনুধাবন করতে খুব ভুল করে ফেলছেন।
এই ভুলের পরিণতি কত দূর গড়ায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।