ইসরায়েলের বর্বর আচরণ সমর্থনের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা
গাজা যুদ্ধে দখলদার ইসরায়েলের বর্বর আচরণ সমর্থনের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পাঁচ ফিলিস্তিনি। মূলত ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রতি সহায়তা কমাতে বা অভিযুক্ত ইউনিটগুলোতে সহায়তা বন্ধ করতে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে মামলাটি করা হয়।
মামলাকারী পাঁচ ফিলিস্তিনি গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন বলে জানা গেছে। গত শতকের ৯০ এর দশকের ‘লেহি আইনের’ আওতায় মামলাটি করা হয়েছে। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজায় চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র দখলদার দেশটিকে অব্যাহতভাবে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ওই ফিলিস্তিনিরা।ি
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর চাইলে লেহি আইন প্রয়োগ করতে পারতো। কিন্তু তারা তা করেনি। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তা নজিরবিহীন ও ভয়ংকর। আর যুক্তরাষ্ট্র তাতে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
আমাল গাজা (ছদ্মনাম) নামের একজন শিক্ষক ও এই মামলার বাদী বলেন, ইসরায়েলি হামলায় আমার পরিবারের ২০ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছি। আমার দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র চরম মানবতালঙ্ঘনকারী ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে।
এদিকে, এই মামলার বিষয়ে জানতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আল জাজিরা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ ও গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। তাছাড়া, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যা উপত্যকাটির মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ।
এমন অবস্থায় গত মাসে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে এরই মধ্যে অভিযুক্ত হয়েছে দখলদার দেশ ইসরায়েল।
সূত্র: রয়টার্স