ইসলাম কি নারীকে শুধু ঘরে থাকতে বলে?
আল্লাহ তাআলার মনোনীত জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলামে নারী ও পুরুষের মর্যাদা সম্মান ও জীবনাচর নিয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। নারী হলেই ঘরে বন্দি থাকতে হবে এমন ধ্যান ধারণা ঠিক নয়। বিধান অনুযায়ী নারী নিয়ম মেনে সব কাজেই অংশগ্রহণ করতে পারবে। নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে সমাজ হবে সুন্দর। অনেকেই না বুঝে বলে বেড়ান, ইসলাম নারীকে ঘরে বন্দি থাকতে বলে। সত্যি কি তাই!
‘না’, ইসলাম কখনো নারীকে ঘরের বাইরে যেতে বারন করেনি। বরং নিযম মেনে ঘরের বাইরে যাওয়ার দিকনির্দেশ দেয়। নারীর আল্লাহর বিধান মেনে ঘরের বাইরে যেতে পারবে। ঘরের বাইরে যাওয়া কিংবা কোনো কাজে অংশগ্রহণ করা নারীর জন্য নিষিদ্ধ নয়। বরং নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই মহান আল্লাহ ঘরের বাইরে যাওয়ার দিকনির্দেশনা এভাবে দেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَ بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡهِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِهِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘হে নবি! আপনি আপনার স্ত্রীদের, মেয়েদের ও বিশ্বাসীদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে (বিশ্বাসী নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হবে; তাহলে তাদেরকে অহেতুক উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৯)
ইসলাম নারীকে সব সময় ঘরে আবদ্ধ থাকতে বলে না। প্রয়োজন হলে নিয়ম মেনে তারা বাইরে যাবে। এতে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের (নারীদের) বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ (বুখারি)
তবে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি দূরের কোনো গন্তব্যে যেতে হয় তবে সে ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একজন মাহরামের সঙ্গে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দেয় ইসলাম। কারণ দূরযাত্রায় কোনো পুরুষ অভিভাবক না থাকলে যে কোনো নারীর জন্যই এ ভ্রমণ বিপজ্জনক হতে পারে। এ সম্পর্কেও হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাহরামের উপস্থিতি ব্যতিত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে না। (এ সময়) এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী হজে বেরিয়ে গেছে। আর (নির্ধারিত কিছু) জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এ কথা শুনে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলেন, ‘ফিরে যাও এবং স্ত্রীর সঙ্গে হজ সমাপন কর।’ (বুখারি)
এ হাদিস থেকে বুঝায় যায়, দূরের কোনো সফর হলে নারী সঙ্গে একজন মাহরাম পুরুষ সঙ্গী থাকা আবশ্যক। যে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদে অংশগ্রহণে নাম লেখানো সাহাবিকেও এ মর্মে অব্যহতি দিয়েছেন যে, হজের দূরের সফরে যেন নারীকে (স্ত্রীকে) সঙ্গ দিতে পারে। এখানে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়েছে।
সুতরাং ইসলাম কখনো নারীকে বাইরে যেতে নিষেধ করে না। তবে বাইরে যাওয়ার জন্য যে হুকুম রয়েছে তথা পর্দা মেনেই নারীকে বাইরে যেতে হবে। এটিই ইসলামের বিধান।
যখন কোনো নারী ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে ঘরের বাইরে যায় কিংবা দূরের কোনো সফরে যায়; আশা করা যায়, নারী ঘরের বাইরের নানাবিধ হয়রানি ও নির্যাতন থেকে সুরক্ষা পাবে। নিরাপদ থাকবে নারী সমাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর নিয়ম মেনে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। দূরের সফরে মাহরাম পুরুষ সঙ্গী নিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।