পরকালে যারা বিশেষ সম্মানের অধিকারী
মুসনাদে আহমদে এসেছে, ‘সকল মুমিমন ব্যক্তির রূহ একটি পাখি; যা জান্নাতের বৃক্ষ সমূহে থাকে আর কিয়ামাতের দিন তারা নিজ নিজ দেহের দিকে ফিরে আসবে। ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘মুমিন মাত্রের রূহই সেখানে জীবিত। কিন্তু শহিদদের রূহ বিশেষ সম্মান, মর্যাদা, বুজুর্গী এবং শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় প্রাণ উৎসর্গ করে তাদেরকে তোমরা কখনো মৃত বলো না; বরাং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা উপলব্দি কর না।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৪)
উল্লেখিত আয়াত বদরের শহিদদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা নাজিল করেছেন। এ যুদ্ধে ছয়জন মুহাজির ও আট জন আনসারি সাহাবি শাহাদাত বরণ করনে। তাঁদের সম্পর্কে যখন কেউ কেউ এ কথা বলাবলি করছিল যে, ওমুক ব্যক্তির মৃত্যু হলো, সে এ দুনিয়ার নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত হলো।
তখন আল্লাহ তাআলা মন্তব্যকারীদের ভ্রান্ত ধারণা নিরসনকল্পে শহিদদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে এ আয়াতে কারিমা নাজিল করেন।
এ আয়াতে ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তিনি বলেন, শহিদদের রূহ সবুজ পাখির কায়ায় রয়েছে এবং জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে তারা যাওয়া আসা করে। অতপর তারা আরশের তলদেশে ঝুলন্ত ঝাড়সমূহে এসে উপবিষ্ট হয়।
একবার তাঁদের (শহিদদের) প্রভু তাঁদের প্রতি লক্ষ্য করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি চাও? তারা জবাব দিল- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এমন এমন নিয়ামাত দান করেছ যা আর কেউ লাভ করেনি। এরপর আর আমাদের কি প্রয়োজন থাকতে পারে?
অতঃপর তাদেরকে পুনরায় এ প্রশ্ন করা হলো। যখন তারা দেখলো যে, এ প্রশ্নের জবাব অবশ্যই দিতে হবে; তখন তারা আরজ করলো- হে আল্লাহ! আমাদেরকে পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার পাঠিয়ে দিন, আমরা তোমার পথে যুদ্ধ করি, তারপর শাহাদাত বরণ করে তোমার সুমহান দরবারে হাজির হই আর শাহাদাতের দ্বিগুণ মর্যাদা লাভ করি।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তা হয় না।’ কেননা এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মৃত্যুর পর পৃথিবীতে কেউ প্রত্যাবর্তন করবে না।
জঙ্গিদের বিষয়ে সতর্কতা
বর্তমান সময়ে ইসলামের বিধান পালনের নামে যে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে, এ অপকৌশলের ছত্রছায়ায় অবস্থান নিয়ে জঙ্গিরা মানুষ হত্যায় জড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ হত্যার পাশাপাশি নিজেদের মৃত্যুকে শাহাদাত হিসেবে দাবি করে। ইসলামের দোহাই দিয়ে জঙ্গিদের শাহাদাতের এ দাবি ইসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য প্রতারণার শামিল।
পরিশেষে…
ছোট্ট একটি হাদিসে এসেছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দান করেছেন, তাদের রূহ সবুজ পাখির পেটে অবস্থান করে এবং জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা তারা বিচরণ করে বেড়ায়। এ হাদিসেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যারা আল্লাহ তাআলার জন্য তাঁর বিধি-বিধান পালনে একনিষ্ঠ; তা পালনে স্বেচ্ছায় খুশিমনে জীবন দান করে, তাদের মর্যাদা কত বেশি। এ সম্মান ও মর্যাদার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল অপকৌশল ও ইসলামের নামে জঙ্গিপনা থেকে হিফাজত করে তাঁর বিধি-বিধান পালনে একনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর বাস্তব আমল নিজের জীবনে প্রতিফলন করার তাওফিক দান করুন। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশেষ মর্যাদা দান করুন। আমিন।