বিদেশীরা নিয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা

0

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশীরা প্রতি বছর কী পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন? এ নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সমীক্ষা রয়েছে। ২০১৭ সালে করা সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দেশে বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি বিদেশী নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতি বছর এসব বিদেশী দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার (৫ বিলিয়ন ডলার)। বর্তমান ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হারে যার পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা।

তবে ২০১৮ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আমাদের দেশে এখন বিপুলসংখ্যক বিদেশী কাজ করছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেশের কাজে লাগছে না। আমরা নিজেরাই দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করবে।

তিনি আরো বলেছিলেন, দেশের বৃহৎ চারটি শিল্পখাতে মধ্যম এবং নির্বাহী পর্যায়ে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে দেশ থেকে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। মূল্যবান এ বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানোর পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশেই দক্ষ জনবল তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

অন্য দিকে ভারতের ব্যাঙ্গালুরভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ২০১৩ সালের ২১ মে ‘ফিফটিন নেশসন সেন্ডিং হাইয়েস্ট রেমিট্যান্স টু ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। অর্থাৎ ভারতের রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে (২০১৩ সাল) বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ভারতীয় বসবাস করছে। এসব ভারতীয় বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে প্রেরণ করছে। আগামী কয়েক বছর অর্থ প্রেরণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এসব ভারতীয় অধিকাংশ তৈরী পোশাক খাত, এনজিও ও বস্ত্রখাতে কাজ করছে।

বিবিসির উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন ২০১৮ সালের ২০ মে এক তথ্যে জানায়, প্রতি বছর এ দেশ থেকে ভারতে ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে চলে যাচ্ছে। মূলত ‘দক্ষ’ জনশক্তির অভাবে এ দেশে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় কাজ করছে। শুধু ভারতীয় নয়, এখানে শ্রীলঙ্কানও কাজ করছে। পাশাপাশি কিছু রয়েছে পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের অধিবাসী।

এ দিকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা বছরে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে।
বেতন-ভাতার নামে এই টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ‘বাংলাদেশে বিদেশীদের কর্মসংস্থান : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গত বুধবার টিআইবির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী কর্মীর প্রাক্কলিত ন্যূনতম সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। ন্যূনতম এই সংখ্যার হিসাবে দেশ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায় এবং তাদের কর ফাঁকির ফলে বছরে ন্যূনতম প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এ দেশে বসবাসরত বিদেশীদের অধিকাংশই কাজ করছে তৈরী পোশাক খাতে। বাদবাকিরা চামড়া শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল ও বিদেশী কয়েকটি সংস্থায় কর্মরত। এসব বিদেশীর অধিকাংশ ট্রাভেল ভিসায় এখানে এসে অবৈধভাবে কাজ করছে। তবে সব বিদেশী এখানে কাজ করার প্রধান কারণ হচ্ছে- তারা যেসব কাজ করছে তা করার জন্য স্থানীয়ভাবে দক্ষ লোক পাওয়া যায় না।

ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই দেশের উদ্যোক্তরা বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষ লোক এনে এখানে নিয়োগ দিচ্ছেন। আর এতে করে দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এখন এ প্রবণতা ঠেকানোর জন্য দেশে দক্ষ লোক তৈরি করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)।

প্রকল্পটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এডিএফ ঋণ, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশনের (এসডিসি) অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ মেয়াদে দক্ষতা উন্নয়নে পাঁচ লাখ দুই হাজার লোককে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনের আওতাভুক্ত শিল্প/প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে। তবে এই প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক লোক প্রশিক্ষণ নিয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com