আরাফার ময়দানে অবস্থানের নিয়ম ও দোয়া
হজের অন্যতম রোকন বা ফরজ হলো উকুফে আরাফাহ বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। হাজ আদায়কারীরা ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করুন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
জোহরের নামাজের আগেই আরাফায় উপস্থিত হবেন। ৯ জিলহজ জোহরের সময় থেকে আরাফায় অবস্থানের সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। যদি কেউ সূর্যাস্তের আগে আরাফার সীমার বাইরে চলে যায়, তাহলে সূর্যাস্তের আগে আবার তাকে আরাফার মাঠে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় দম ওয়াজিব হবে।
কেউ যদি জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে আরাফার ময়দানে পৌঁছতে না পারে, তাহলে সেদিন রাতের মধ্যে সুবহে সাদিক পর্যন্ত কিছুক্ষণের জন্য আরাফায় অবস্থান করতে পারলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। ৯ জিলহজ জোহরের পর থেকে আগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত কিছুক্ষণের জন্যও আরাফায় অবস্থান করতে না পারলে হজ বাতিল হয়ে যায়।
আরাফায় অবস্থানের নিয়ম
আরাফায় অবস্থানকালীন সময়ে উত্তম হলো কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তালবিয়া, দরুদ, দোয়া, জিকিরে মশগুল থাকা। সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব দাঁড়াবে, কিছুক্ষণ বসবে, আবার সম্ভব হলে দাঁড়াবে।
এ সময় দোয়া কবুল হয়। তাই বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত, নিজের অভাব অভিযোগগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা উচিত। এটা জীবনের একটি বিশেষ সময়, অনেকে হয়তো আর কখনও এ সুযোগ পাবেন না, তাই অহেতুক কাজে কিছুতেই সময় নষ্ট করা সমীচীন নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন,
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ
আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (অর্থাৎ তারা যা চায়, তাই তাদের দেওয়া হবে) (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)
আরাফার ময়দানে যে দোয়া পড়বেন
আরাফার ময়দানে পড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। কোরআন হাদিসে বর্ণিত সুন্দর দোয়াগুলো পড়তে পারেন। নিজের ভাষায় নিজের মতো করেও দোয়া করতে পারেন। এখানে আমরা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়া উল্লেখ করছি যেগুলো আরাফায় অবস্থানকালীন সময়ে পড়তে পারেন।
১. কোরআনে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন,
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান-নার
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
২. দ্বীনের ওপর অবিচলতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে আল্লাহ আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ
উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিনলাদুনকা রাহমাহ ইন্নাকা আনতাল-ওয়াহহাব
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)
৩. আল্লাহর প্রশংসা করে আগে ও পরের সব গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে দোয়া করতেন,
للَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، قَوْلُكَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَأَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ، أَنْتَ إِلَهِي لاَ إِلَهَ لِي غَيْرُكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি লাকাল হামদু আনতা কাইয়িমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়া মান ফীহিন্না লাকাল হামদু আনতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি কাওলুকাল হাক্কু ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু ওয়া লিকাউকা হাক্কুন ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন ওয়ান নারু হাক্কুন ওয়াস সাআতু হাক্কুন আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খাসামতু ওয়া ইলাইকা হাকামতু ফাগফির লী মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া আসরারতু ওয়া আ’লানতু আনতা ইলাহী লা ইলাহা লী গায়রুকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সব প্রশংসা; আপনি আসমানসমূহ ও জমিনের প্রতিপালক! আপনারই সব প্রশংসা আপনি আসমান, জমিন এবং এগুলোর মধ্যকার সবকিছু সুনিয়ন্ত্রক। আপনারই সব প্রশংসা আসমানসমুহ ও জমিনের নূর আপনিই। আপনার বাণীই যথার্থ। আপনার প্রতিশ্রুতি যথাযথ। আপনার সাথে সাক্ষাত নির্ধারিত। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। কেয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমি নিবেদিত। আপনার প্রতিই আমি ঈমান এনেছি। একমাত্র আপনারই ওপর ভরসা করেছি। ফিরে এসেছি আপনারই সমীপে। আপনারই সাহায্যে দুশমনের মোকাবেলা করেছি। (হক ও বাতিলের ফায়সালা) আপনারই ওপর ন্যাস্ত করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, ক্ষমা করে দিন আমার পূর্বের ও পরের গোনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গোনাহ। আপনি আমার ইলাহ, আপনি ছাড়া আমার কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ বুখারি: ৭৩৮৫)
৪. নিজের সার্বিক প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে দোয়া করতেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْلِي وَارْحَمْنِي وَاجْبُرْنِي وَارْفَعْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِني وَارْزُقْنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়ারফা’নী ওয়াহদিনী ওয়াআফিনী ওয়ারযুকনী
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আমার প্রয়োজন পূরণ করুন, আমাকে উন্নত করুন, পথ দেখান, নিরাপত্তা দিন এবং জীবিকা দান করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮)