সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্য বাস্তব নয়: সানেম

0

জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন ও রিজার্ভ বাড়ানোর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মত দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনায় এমন মতামত দেওয়া হয়। প্রথমে বাজেট পর্যালোচনার ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। পরে বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদহার এত দেরিতে বাড়ানো হয়েছে যে এর আগেই চাহিদা নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যমূল্য বাড়ান। এ জন্য যে ধরনের শক্ত পদক্ষেপ দরকার তা বাজেটে নেই, বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেখানে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে দুর্নীতি উৎসাহিত করবে বলে মত দেন তারা।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে করের আওতা না বাড়িয়ে গতানুগতিকভাবে কেবল প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। এটা না করে ধনীদের ওপর কর বাড়ানো দরকার ছিল। কেননা ধনিক শ্রেণি ও রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণে নানাভাবে কর দেন না। অবশ্য এবার সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার বিষয়টি ইতিবাচক।

তিনি আরও বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ন্যায়ভিত্তিক সমাজের সঙ্গে কোনোভাবেই এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ না। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হবেন। ব্যাংক খাত সংস্কারের কথা অনেক আগ থেকে বলা হচ্ছে না। ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও কালো টাকার মালিকরা একই সূত্রে গাঁথা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ইতস্তত কেন?

মূল্যস্ফীতি কমাতে অনেক দেরিতে সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ডলারের দর বাড়ানো হলেও এখনও পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়নি। সাধারণভাবে সুদহার বাড়ানো হয় চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য। তবে ধারাবাহিকভাবে ৯ থেকে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইতিমধ্যে এমন এক জায়গায় নেমেছে যে সুদহার দিয়ে আর চাহিদা নিয়ন্ত্রণ হবে না।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে গত এক দশক ধরে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানেও সুদহারের কোনও প্রভাব পড়বে না, বরং এ সময়ে সুদহার অনেক বাড়লে আর্থিক খাতের অবস্থা খারাপ হবে। আবার ব্যবসায়ীরা এটিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে পণ্যমূল্য আরও বাড়াবে।

এমনিতেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনায় কারণে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা হঠাৎ দর বাড়িয়ে দেন। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ধরনের কঠিন পদক্ষেপ দরকার তা এবারের বাজেটে নেই। আবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের যে ধরনের সমন্বয় দরকার তাও নেই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com