টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সাল নাগাদ বাল্যবিবাহ নিরসনের আহ্বান
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সাল নাগাদ বাল্যবিবাহ নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা ২২ গুণ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
বুধবার (৫ জুন) ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজের (জিপিইসিএম) তৃতীয় পর্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় এসব তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ-ইউনিসেফের ‘গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ’-এর তৃতীয় পর্যায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনি নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ কর্মসূচি চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এখানে দেশজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা হবে। এর লক্ষ্য হবে বাল্যবিবাহ নিরসনে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান। কর্মসূচির নতুন এই ধাপে শিশুবিবাহবিরোধী আইন ও নীতিমালা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষার স্কিমগুলো আরও কার্যকর করা ও কমিউনিটিরর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জিপিইসিএমএর তৃতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের যে অঙ্গীকার, তার মূলে রয়েছে বাল্যবিবাহ নিরসন। আমরা ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের সঙ্গে বাল্যবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকরভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। শুধু আইনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নিরসন করা যাবে না। সে কারণে এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করার ওপরেও আমরা গুরুত্ব দেবো।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুদের বিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তার জন্য গ্লোবাল প্রোগ্রামে বাল্যবিবাহ নিরসনেকাজ করা হবে। সে লক্ষ্যে অনেক খাতের সম্মিলন ঘটিয়ে পরিবর্তন এবং তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে ইউএনএফপিএর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখুস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ হারে শিশুবিবাহ কমছে। এর অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য ২১৫ বছর লেগে যাবে। কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারলে তা বেশি কাজে দেবে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন কিশোরীদের তাদের শরীর ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে, যা তাদের পরিবর্তনের দূত ও ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া বলেন, ইউনিসেফ আবারও প্রতিটি শিশুর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে গ্রামীণ কিশোরী ও অল্পবয়সী নারীদের জীবনদক্ষতা তৈরিতে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েই কর্মসূচির নতুন এই পর্যায় শুরু করছে। যেসব জেলায় উচ্চ মাত্রায় বাল্যবিবাহ রয়েছে, সে সব জায়গায় আমরা অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে এর মূল কারণ মোকাবিলা করব।
কর্মসূচির আগের পর্যায়গুলোতে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ যৌথভাবে সরকারকে সহায়তা দিয়ে এসেছে। যাতে ৫৫ লাখ শিশুর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এই পর্যায়গুলোতে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের কারণ উদঘাটন, তৃণমূলের সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়ন, বিদ্যমান সেবাসমূহ আরও জোরদার করা এবং অসহায় কন্যাশিশুদের সুরক্ষার জন্য কাজ করার ক্ষেত্রেও ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিয়ে এসেছে।