সরকার দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলছে
সরকার দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন অভিভাবক সমাজ। তারা বলেন, প্রতিদিন নিত্য-নতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কীভাবে পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হযবরল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়-বিপন্ন।
শুক্রবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সচেতন অভিভাবক সমাজ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তারা।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, সরকার কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলছে। দেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা পুতুল খেলছে তাদের কোনও আবেগ বা বিবেক নেই। তারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এই ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করছে। এসব যজ্ঞ শুরুর সময় তারা অনেক আশার কথা শোনায় এবং সেটা ব্যর্থ হলে আবার আরেকটা হাজির করে। আগেরটা কেন ব্যর্থ হলো, এর জন্য কে দায়ী, কে জবাবদিহি করবে, এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে— পরে এসব তারা বেমালুম ভুলে যায়।
অভিভাবকরা বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এ বছর তা ২য়, ৩য়, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণিতে চালু হয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটা ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে। এরপর ২০২৬ ও ২০২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে।
‘আজ কারিকুলাম চালু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় সারা দেশের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে তথাকথিত স্মার্ট নাগরিক বানানো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বানানোর এই কারিকুলামের মাধ্যমে যেটুকু লেখাপড়া ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন নিত্য-নতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হযবরল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়, বিপন্ন।’
অভিভাবকরা আরও বলেন, প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার আরও পতন ঘটছে। অবিলম্বে সমন্বিত একমুখী শিক্ষা কারিকুলামের নামে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি বেখাপ্পা ও ধ্বংসাত্মক এই কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
ডা. আরিফ মোর্শেদ খান নামে এক অভিভাবক বলেন, নতুন কারিকুলামের জন্য আমাদের বাচ্চারা রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত জেগে থাকছে। রাতে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তারা সকালে কীভাবে স্কুলে যাবে। আমাদের বাচ্চারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। এই কারিকুলামটা কিছু নির্দিষ্ট মানুষের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এসময় নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, নতুন কারিকুলামে অভিভাবকরা আজকে দিশেহারা হয়ে গেছে। স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করানো হচ্ছে না। তাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। আর এই অ্যাসাইনমেন্টে তারা আর্থিক চাপে পড়ছে।
এই সরকার যখন নতুন কারিকুলাম তৈরি করেছে তখন বলেছে তারা দেশে কোচিং ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আমরা আজকে বলতে চাই, দেশে কী কোচিং ব্যবসা বন্ধ হয়েছে? গাইড পড়ানো বন্ধ হয়েছে? আমরা অবিলম্বে এই শিক্ষাব্যবস্থা বাতিল চাই, একইসঙ্গে আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চাই।