২২ বছরে সুন্দরবনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি: বাপা
গত ২২ বছরে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দরবনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার (৪ মে) সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। বারবার বনে আগুন লাগছে কিন্তু আমরা নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না। সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
বুধবার (২২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন : কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এসব তথ্য জানান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী।
ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের মোহনায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিস্তীর্ণ বন। দেশে সংরক্ষিত বনের শতকরা ৫১ ভাগই সুন্দরবন। বাংলাদেশের দক্ষিণের ৩টি জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত। এছাড়া বৈজ্ঞানিক, নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব বাজারে পরিচিতিও দিয়েছে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, কেওড়া, বাইন, গরান, খলসি ইত্যাদি বনবৃক্ষ সুন্দরবনের সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী, যা ৫১.৭০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যেমন- শন, নলখাগড়া এবং গোলপাতার অবদান অন্যতম। কিন্তু আমরা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারছি না। আমরা নিজ হাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছি। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন থেকে শুরু করে বাঘ নিধন এবং হরিণ শিকার করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি আইন অমান্য করে। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগছে নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না।
তিনি বলেন, গত ২২ বছরে সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দর বনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার (৪মে) সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। ৪৭ ঘণ্টা পর সোমবার (৬ মে) দুপুর সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাণীকূলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বনের প্রাণ-প্রকৃতির শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে বনের প্রাণীকূলের খাদ্যচক্রে। চরম আঘাত আসে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপরে। তাই সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। এসময় সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডে বন্ধে ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।