কেয়ামতের সহজ ও কঠিন হিসাব
সুরা ইনশিকাক কোরআনের ৮৪তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ২৫টি। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ অন্য সুরাগুলোর মতোই সুরা ইনশিকাকে প্রধানত ইমান ও কুফর, কেয়ামতের ভয়াবহতা, আখেরাতের হিসাব নিকাশ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। সুরার শুরুতে কেয়ামতের ভয়াবহতা, বিশ্বজগতে কী কী পরিবর্তনের মাধ্যমে কেয়ামত শুরু হবে তা উল্লেখিত হয়েছে। এরপর কেয়ামতের হিসাব-নিকাশ ও মানুষের দুইভাবে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারো হিসাব হবে সহজ, কারো হিসাব কঠিন হবে। কেউ পুরস্কৃত হবে, কেউ শাস্তির মুখে পড়বে। সুরার শেষে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের ইমান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সুরা ইনশিকাকের ১-১৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
(১)
إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ
ইযাছ সামাউন শাক্কাত।
যখন আকাশ ফেটে যাবে।
(২)
وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
ওয়া আযিনাত লিরাব্বিহা ওয়া হুক্কাত।
আর তার রবের নির্দেশ পালন করবে এবং এটাই তার করণীয়।
(৩)
وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ
ওয়া ইযাল আরদু মুদ্দাত।
এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।
(৪)
وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
ওয়া আল কাত মা ফীহা ওয়া তাখাল্লাত।
এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শুন্যগর্ভ হয়ে যাবে।
(৫)
وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
ওয়া আযিনাত লিরাব্বিহা ওয়া হুক্কাত।
আর তার রবের নির্দেশ পালন করবে এবং এটাই তার করণীয়।
(৬)
يَا أَيُّهَا الْإنْسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ كَدْحاً فَمُلاقِيهِ
ইয়াআইয়ুহাল ইনছানু ইন্নাকা কাদিহুন ইলা রাব্বিকা কাদহান ফামুলাকীহ।
হে মানুষ, তোমার রব পর্যন্ত পৌঁছতে অবশ্যই তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাৎ পাবে।
(৭)
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
ফাআম্মা মান ঊতিয়া কিতাবাহূ বিয়ামীনিহ।
অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে;
(৮)
فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً
ফাসাওফা ইউহাসাবু হিসাবাইঁ ইয়াসীরা-।
তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে
(৯)
وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُوراً
ওয়া ইয়ানকালিবু ইলা আহলিহী মাসরূরা।
আর সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে।
(১০)
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ
ওয়া আম্মা মান ঊতিয়া কিতাবাহূ ওয়ারাআ জাহরিহ।
আর যাকে তার আমলনামা পিঠের পেছনে দেয়া হবে,
(১১)
فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُوراً
ফাসাওফা ইয়াদঊ সুবূরা-।
সে তার মৃত্যুকে ডাকবে
(১২)
وَيَصْلَى سَعِيراً
ওয়া ইয়াসলা সাঈরা-।
এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(১৩)
إِنَّهُ كَانَ فِي أَهْلِهِ مَسْرُوراً
ইন্নাহূ কানা ফী আহলিহী মাসরূরা।
সে তো তার স্বজনদের মধ্যে আনন্দে ছিল,
(১৪)
إِنَّهُ ظَنَّ أَنْ لَنْ يَحُور
ইন্নাহূ জান্না আল্লাইঁ ইয়াহূরা।
সে মনে করত যে, সে কখনও ফিরে যাবে না।
(১৫)
بَلَى إِنَّ رَبَّهُ كَانَ بِهِ بَصِيراً
বালা ইন্না রাব্বাহূ কানা বিহী বাসীরা।
কেন যাবে না, তার রব তো তাকে দেখতেন।
এই আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. মৃত্যু পরবর্তী জীবন, হিসাব-নিকাশ, আল্লাহর শাস্তি ও প্রতিদান সুনিশ্চিত। তাই আমাদের কর্তব্য সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
২. দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে, আল্লাহর পথে অবিচল থাকবে, আখেরাতে তাদের সাথে আল্লাহর সাক্ষাত হবে। এটাই হবে মুমিনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
৩. সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিজের ভালো ও মন্দ কাজের দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। ভালো কাজের জন্য সে পুরস্কৃত হবে, খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পাবে।
৪. কেয়ামতের দিন মুমিন ও মুত্তাকীদের হিসাব সহজ করা হবে। যার কঠিন হিসাব হবে, সে শাস্তির মুখে পড়বে। আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি বলেছেন, কেয়ামতের দিন যার হিসাব নেয়া হবে, সে অবশ্যই ধ্বংস হবে। আমি বললাম, আল্লাহ তাআলা কি এ কথা বলেননি, ‘তার সহজ হিসাব নেয়া হবে।’ উত্তরে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো শুধু পেশ করা মাত্র। কিন্তু যার খুটিনাটি যাচাই করা হবে, সে ধ্বংস হবেই। (সহিহ বুখারি: ৪৯৩৯, সহিহ মুসলিম: ৮০)
৫. দুনিয়াতে আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাস অনেক সময় ইমান ও নেক আমল থেকে গাফেল থাকার, আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণ হয়। এ ব্যাপারে সচেতন থাকা কর্তব্য।