কংগ্রেস নেতার মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘লাভ জিহাদ’ বলছে বিজেপি, উত্তাল কর্ণাটক
ভারতের কর্ণাটকে কংগ্রেস নেতার মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই মেয়েকে সাতবার ছুরিকাঘাত করে নিজের সহপাঠী। পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে, প্রেমের সম্পর্ক প্রত্যাখান করায় মেয়েটিকে হত্যা করে ওই যুবক।
নিহত নেহা হিরেমাথ (২৩) হুবলির একটি কলেজের কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন এবং ঘাতক ফায়াজ খন্দুনাইক তাঁর সহপাঠী ছিলেন। একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মতে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ফায়াজ দাবি করেছিলেন, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল কিন্তু সম্প্রতি মেয়েটিকে এড়িয়ে চলেছিলেন।
ইস্যুটি কর্ণাটকের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস এটিকে ব্যক্তিগত কারণে হত্যাকাণ্ড হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করলেও বিজেপি বলেছে, এই ঘটনা প্রমাণ করে রাজ্যে কি পরিমাণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে।
এদিকে ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ধারওয়াদ লোকসভার বিজেপি প্রার্থী প্রহলাদ যোশি এই ঘটনার পেছনে ‘প্রেম জিহাদ’ রয়েছে বলে সন্দেহ করেছেন।
প্রেম জিহাদ বা লাভ জিহাদ হলো হিন্দুত্ববাদ প্রবক্তাদের তৈরি করা একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এতে মনে করা হয়, একটি সংগঠিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বৃহত্তর জনসংখ্যাগত যুদ্ধের জন্যে তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে মুসলিম পুরুষেরা হিন্দু নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রলোভন, প্রেমের ফাঁদ, প্রতারণা, অপহরণ বা বিবাহ করে থাকে।
কংগ্রেস শাসনামলে কর্ণাটকে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে অভিযোগ করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে সংখ্যালঘু তুষ্টির রাজনীতি এবং ‘বিশেষ সম্প্রদায়ের’ প্রতি বিশেষ আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রাজ্যটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত এখানে কোনো ‘প্রেম জিহাদ’ এর আলামত নেই।
মেয়েটির বাবা কংগ্রেস নেতা ও শিল্পপতি নিরঞ্জন হিরেমাত হত্যাকাণ্ডকে ‘প্রেম জিহাদ’ বলে অভিহিত করার পর রাজ্য সরকার আরও সমস্যায় পড়েছে। মেয়ের বাবার দাবি, অভিযুক্তরা ‘তাঁর মেয়েকে ফাঁদে ফেলার’ পরিকল্পনা করেছিল।
হিরেমাথ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গ্যাংটি দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করেছিল। তাঁরা আমার মেয়েকে ফাঁদে ফেলার বা হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তারা হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে মেয়ে আমার হুমকিতে কর্ণপাত করেনি। আমার মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে তা গোটা রাষ্ট্র এবং দেশ সাক্ষী। তারা বলছে, এটা ব্যক্তিগত, এখানে ব্যক্তিগত কী? হত্যাকারীরা কি আমার আত্মীয়?’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখিও রাজ্যের কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, কংগ্রেসের সি-এর অর্থ ‘দুর্নীতি, অপরাধ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।’
বিজেপির এই এমপি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, যেকোনো সরকারের জন্য স্কুলে বাচ্চাদের সঠিক নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা একটি প্রধান কর্তব্য। এমনকি জনগণেরও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সচেতনতা থাকা উচিত। মানুষের এই বিশ্বাস থাকা উচিত যে, রাজ্য প্রশাসন অপরাধীদের আইনের আওতায় নেবে। তবে কংগ্রেস এই বিষয়ে (কর্নাটকে) চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
তবে কংগ্রেস জবাবে বলেছে, ‘রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা অটুট রয়েছে এবং বিজেপি কর্ণাটকে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি করার চেষ্টা করছে। বিজেপি আমাদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে…কর্ণাটকের আইন-শৃঙ্খলা সুষ্ঠু রয়েছে…তারা ভোটারদের বলতে চায় যে, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি করতে চলেছে। আর অশোক (বিজেপি নেতা এবং বিরোধী দলের নেতা) এটাই বলছেন। তারা রাজ্যকে রাজ্যপালের শাসনের অধীনে রাখতে চায়, কিন্তু তারা তা করতে পারছে না।’