স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ: রাশিয়া
টেকসই ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হবে। জাতিসঙ্ঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার সতর্ক করেছি, একটি স্থায়ী ও টেকসই যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে মানবিক প্রচেষ্টা ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশ্যই এই যুদ্ধবিরতি সামরিক পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সহকর্মী, মানবিক কর্মীরা সেনাবাহিনীর হামলার মুখে সম্পূর্ণ অরক্ষিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি এক পক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় এবং বিশেষ করে যখন নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্যের কাছ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে কাউন্সিলের প্রস্তাবগুলো বাধ্যতামূলক নয়, তাহলে কোনো স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে না।’
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি ভূ-খণ্ড যুদ্ধ জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৭২৮-এর দাবির বিপরীতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও নিয়ম লঙ্ঘন করে তীব্র রুপ ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে গাজার জনসংখ্যার জন্য মানবিক সাহায্য বিতরণ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জাতিসঙ্ঘ সংস্থাগুলো একমত যে ছিটমহলে মানবিক সরবরাহ কার্যত অস্তিত্বহীন। ওসিএইচএ-এর মতে, ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী মানবিক সহায়তার অর্ধেক সরবরাহ যান অবরুদ্ধ করে রেখেছে। একই সময়ে মানবিক কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তে মানবিক সরবরাহের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এবং সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য যথেষ্ট আর্থিক সংস্থান রয়েছে। শুধুমাত্র চেকপয়েন্টগুলো খুলে দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।’
নেবেনজিয়া নিশ্চিত যে জাতিসঙ্ঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অ্যাজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্টের (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যক্রম এই পরিস্থিতিতে অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাজেন্সির কর্মীদের বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানাই। যারা অমানবিক পরিস্থিতিতে তাদের জীবন দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করেন। আজ পর্যন্ত ১৭৮ জন কর্মী তাদের জীবন হারিয়েছেন। একক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু।’
রাশিয়ান কূটনীতিক বলেন, ‘সেই পটভূমিতে ইউএনআরডব্লিউএকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা এবং অ্যাজেন্সিটি ভেঙে দেয়ার আহ্বান যা আমরা এই চেম্বারেও শুনেছি, স্পষ্টতই অগ্রহণযোগ্য। ইউএনআরডব্লিউএ প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নির্বিচার অভিযোগগুলো এই বৃহৎ এবং অত্যাবশ্যক জাতিসঙ্ঘের সত্ত্বাকে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। গাজায় সংস্থাটির ১৩ হাজার কর্মীর কার্যক্রম স্থগিত করা হলে তা লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য সম্মিলিত শাস্তির আরেকটি বেআইনি এবং অনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠবে।’
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন ফিলিস্তিন ছিটমহলে নিহত মানবিক কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে।
জাতিসঙ্ঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর এ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ২২৪ মানবিক কর্মী নিহত হয়েছেন।
সূত্র : বাসস