ইসরাইলি হামলায় গাজায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ’ বাইডেন
ইসরাইলি বিমান হামলায় ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাত কর্মী নিহত হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি ‘ক্ষুব্ধ’ ও ‘আহত’।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘এই কর্মীরা যুদ্ধের মাঝখানে ক্ষুধার্ত বেসামরিক লোকজনের মাঝে খাবার সরবরাহ করছিলেন। তারা সাহসী ও নিঃস্বার্থ ছিলেন। তাদের মৃত্যু দুঃখজনক।’
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবারের এই হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ইসরাইল নিশ্চিতভাবেই বেসামরিক মানুষের প্রয়োজনীয় সরবরাহ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।
গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং এ ব্যাপারে ইসরাইলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি। তাছাড়া বন্দী চুক্তির অংশ হিসেবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্যও ক্রমাগত চাপ দেয়ার কথা বলেন তিনি।
এদিকে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন জানিয়েছে, হামলার পর ওই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, তারা দেইর আল-বালাহর একটি গুদামে ১০০ টন খাদ্য সহায়তা সরবরাহ সম্পন্ন করে তাদের লোগো সম্বলিত দুটি সাঁজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল।
তারা অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সাথে আগে থেকেই তাদের গতিবিধি সমন্বয় করা ছিল। তা সত্ত্বেও এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বাহিনী নিরীহ মানুষের ওপর হামলার কথা স্বীকার করে এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে যেখানে আমাদের বাহিনী অনিচ্ছাকৃতভাবে গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধে এমন ঘটে। আমরা বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি এবং অন্যান্য সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আর এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড ও ব্রিটেনের নাগরিক এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছিল ত্রাণ সংস্থাটি।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, মঙ্গলবার তারা কয়েক ঘণ্টার কঠিন অভিযানে সাতটি লাশ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে যাতে দক্ষিণ গাজার রাফা ক্রসিং দিয়ে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
এই হামলাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রধান নির্বাহী এরিন গোর। তিনি আরো বলেন, ‘এই যুদ্ধে কেবল আমাদের ওপরই নয় সমস্ত মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এই যুদ্ধে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্রের মতন ব্যবহারের ভয়ঙ্কর অমানবিক ঘটনা ঘটছে।’
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিফ) হামলা হৃদয়বিদারক এবং তিনি এতে তার প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের হারিয়ে শোকাহত।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, আন্দ্রেসকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গভীর সমবেদনা জানান। তাছাড়াও তিনি পুরো ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন পরিবারের সাথে শোক প্রকাশ করছে।
এদিকে মঙ্গলবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, তিনি আন্দ্রেসের সাথে কথা বলেছেন এবং সেনাবাহিনীর গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে তারা কিভাবে কী ঘটেছে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে দেখছেন।
একই দিন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, তিনি এই হামলায ‘ক্ষুব্ধ’। তাছাড়া এ ব্যাপারে দায়ীদের কর্মকাণ্ডকে ‘সমর্থনযোগ্য নয়’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ান ত্রাণকর্মী লালজাওমি ‘জোমি’ ফ্রাঙ্ককমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার সরকার ‘সম্পূর্ণ জবাবদিহিতা’ আশা করছে। তিনি এটিকে মানবিক বিপর্যয় এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহনযোগ্য বলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লো সিকোরস্কিও পোল্যান্ডে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের কাছে জরুরি ব্যাখ্যা চেয়েছেন বলে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান।
এদিকে হামলায় মঙ্গলবার ব্রিটিশ নাগরিকদের মৃত্যুর খবর যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এ হামলার নিন্দা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানান।
ইসরাইলের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর হামাসকে চিরতরে নির্মূল অভিযান শুরু করে তারা।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গাজায় ইসরাইলের এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য মতে, নিহতদের এক-তৃতীয়াংশই হামাস সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিসর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা