‘উচ্চ মর্যাদার একটি আমল’ যে আমলে আল্লাহ মানুষকে অতি মর্যাদা দান করেন
উচ্চ মর্যাদার একটি আমল। মহান আল্লাহর একটি গুণ। আমলটির বিনিময় অনেক বেশি। এ আমলের বরকতে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বেশি বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবিকেও এ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। কী সেই আমল?
কেউ অন্যায় করলে ক্ষমা করে দেওয়া আবার নিজেদের অপরাধের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করা। এর বিনিময়ে রয়েছে মহান পুরস্কার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির ঘোষণা। আবার আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার হাতছানি।
আল্লাহ তাআলা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি কাজের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِیۡنَ
‘(হে নবি!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১১৯)
এ আয়াতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করার নিদেশ দিয়েছেন। এটি মহান আল্লাহর গুণ। মর্যাদা সম্পন্ন এ আমলটির নির্দেশই দেওয়া হয়েছে এ আয়াতে। উম্মতে মুহাম্মাদিও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণে এ আমলে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন।
ক্ষমা আল্লাহর বিশেষ গুণ। তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। এ কারণেই কোরআন-সুন্নায় বার বার ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ ও উপদেশ এসেছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এ একটি গুণেই মানুষ ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী হয়।’
হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর এ বিশেষ গুণে তাঁর উম্মতদের রঙিন হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। যদি কেউ বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে এবং কেউ অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করে তবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মর্যাদা ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাকাত বা দানের কারণে কখনো সম্পদ কমে না। অবশ্যই ক্ষমা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ তাআলা (বান্দার) মান-সন্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে লোক বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তাকে অতি মর্যাদা দান করেন।’ (তিরমিজি, মুসলিম)
ক্ষমা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যা মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহর কাছে তারা সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে পরিচিত হয়। এটি আল্লাহর গুণ। আল্লাহ নিজেই ক্ষমাশীল। তিনিও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। ক্ষমাকারীদের মহান আল্লাহ ভালোবাসেন। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেন-
الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)
ভুল-ভ্রান্তি আর ভালোমন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। এ ভুলের কারণেই মানুষের মাঝে তৈরি হয় ক্ষোভ, রাগ ও বিদ্বেষ। যা এক সময় মারাত্মক অপরাধে পরিণত হয়। যদি কেউ মানুষের এ পারস্পরিব ভুল-ভ্রান্তিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে মিলেমিশে চলে; ভুলকারীকে ক্ষমা করে দেয় তবে ক্ষমাকারী ব্যক্তির ইজ্জত সম্মান বেড়ে যাবে। মহান রবের ভালোবাসা পেয়ে ধন্য হবে। যা কোরআন-সুন্নাহর ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنۡ تُبۡدُوۡا خَیۡرًا اَوۡ تُخۡفُوۡهُ اَوۡ تَعۡفُوۡا عَنۡ سُوۡٓءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَفُوًّا قَدِیۡرًا
‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৯)
وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ
‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস-নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৪০)
ক্ষমায় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। ব্যক্তি পরিবার সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমাকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। সুতরাং আল্লাহর ভালোবাসা, ক্ষমা ও সম্মান-ইজ্জত অর্জনে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই। যিনি মহান ক্ষমাকারী। এ কারণেই রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘অপরাধ মার্জনা (ক্ষমা) করার কারণে, আল্লাহ (মার্জনাকারীর) সম্মান ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে ক্ষমার গুণে রঙিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। ক্ষমার গুণ অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়ায় নিজেদের ইজ্জত ও সম্মান বাড়ানোর তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ভালোবাসা ও ক্ষমা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।