জুমার দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়া
জুমার দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়া। ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে পরিষ্কার ও উত্তম জামা-কাপড় পরে প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে চলে যাওয়া এবং নামাজ ও দোয়া-জিকিরে মগ্ন থাকা। এরপর একাগ্রতার সঙ্গে ইমাম সাহেবের খুতবা শোনা এবং উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় করা। এটাই হল, জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাধিক ফজিলতের আমল। হাদিসে জুমার দিনের অনেক ফজিলতের কথা এসেছে। তাহলো-
এক সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়ে যায়
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، كَفّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنّ، مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ.
এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফ্ফারা (পাপমোচনকারী), যদি কবিরা গুনাহ না করা হয়। (মুসলিম ২৩৩; ইবনে মাজাহ ১০৮৬; তিরমিজি ৪১৪)
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
َدْرُونَ مَا يَوْمُ الْجُمُعَةِ ؟ قَالَ: قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. ثُمّ قَالَ: >تَدْرُونَ مَا يَوْمُ الْجُمُعَةِ<؟ قُلْتُ: اللهُ عَزّ وَجَلّ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: قُلْتُ فِي الثّالِثَةِ أَوِ الرّابِعَةِ: هُوَ الْيَوْمُ الّذِي جُمِعَ فِيهِ أَبُوكَ أَوْ أَبُوكُمْ. قَالَ: >لَكِنِّي أُخْبِرُكَ بِخَبَرِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَطَهّرُ ثُمّ يَمْشِي إِلَى الْمَسْجِدِ، ثُمّ يُنْصِتُ، حَتّى يَقْضِيَ الْإِمَامُ صَلَاتَهُ، إِلّا كَانَتْ كَفّارَةَ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ يَوْمِ الْجُمُعَةِ الّتِي قَبْلَهَا، مَا اجْتُنِبَتِ الْمَقْتَلَةُ.
তুমি জানো, জুমার দিন কী? আমি উত্তর দিলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক অবগত আছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, জুমার দিন কী? আমি একই জবাব দিলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তিনি তৃতীয়বার প্রশ্ন করলেন, বল তো জুমার দিন কী?
আমি তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বললাম, জুমা হল ঐ দিন, যাতে আদম আলাইহিস সালামকে জমা করা হয়েছে। (অর্থাৎ তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে।)
তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এসব কিছু না।) বরং আমি তোমাকে জুমার দিনের খবর (আসল ফজিলত) সম্পর্কে অবগত করছি। কোনো মুসলিম যদি পবিত্র হয়ে জামে মসজিদের দিকে হাঁটতে থাকে, এরপর ইমাম নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে তাহলে এ নামাজ এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তার গুনাহসমূহের কাফ্ফারা (মোচনকারী) হয়ে যাবে, যদি ধ্বংসকারী তথা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (ইবনে খুযায়মা ১৭৩২; মুসনাদে আহমাদ ২৩৭২৯; নাসাঈ ১৬৭৭)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَلَبِسَ مِنْ أَحْسَنِ ثِيَابِهِ، وَمَسّ مِنْ طِيبٍ إِنْ كَانَ عِنْدَهُ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَلَمْ يَتَخَطّ أَعْنَاقَ النّاسِ، ثُمّ صَلّى مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، ثُمّ أَنْصَتَ إِذَا خَرَجَ إِمَامُهُ، حَتّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، كَانَتْ كَفّارَةً لِمَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ جُمُعَتِهِ الّتِي قَبْلَهَا.
‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, তার কাছে থাকা সুন্দরতম জামাটি পরলো এবং সংগ্রহে থাকলে সুগন্ধি ব্যবহার করলো, এরপর জুমাতে উপস্থিত হলো, কারো কাঁধ ডিঙ্গিয়ে গেল না, তারপর আল্লাহর তাওফিক অনুযায়ী সুন্নত-নফল পড়লো, এরপর খতিব (খুতবার জন্য) বের হওয়া থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকলো, তার এই নামাজ এ জুমা থেকে সামনের জুমা পর্যন্ত (গুনাহের) কাফ্ফারা হবে।’ (আবু দাউদ, ৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ ১১৭৬৮; ইবনে হিব্বান ২৭৭৮; ইবনে খুযায়মা ১৭৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম ১০৪৬৫)
জুমায় দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়
আল্লাহ তাআলা রহমত ও মাগফিরাতের পরিধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর রাসুলের যবানে ঘোষণা শুনিয়েছেন, জুমার নামাজের বদৌলতে দশ দিনের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فَاغْتَسَلَ الرّجُلُ، وَغَسَلَ رَأْسَهُ، ثُمّ تَطَيّبَ مِنْ أَطْيَبِ طِيبِهِ، وَلَبِسَ مِنْ صَالِحِ ثِيَابِهِ، ثُمّ خَرَجَ إِلَى الصّلَاةِ، وَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمّ اسْتَمَعَ لِلْإِمَامِ، غُفِرَ لَهُ مِنَ الْجُمُعَةِ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ.
‘জুমার দিন যে ব্যক্তি মাথা ধুয়ে গোসল করে, এরপর উত্তম আতর ব্যবহার করে এবং তার জামাগুলো থেকে ভালো জামাটি পরে, তারপর নামাজের উদ্দেশে বের হয়, (মসজিদে গিয়ে একসঙ্গে থাকা) দুইজনের মাঝে গিয়ে বসে না, এরপর মনোযোগের সঙ্গে ইমামের খুতবা শোনে, ঐ ব্যক্তির এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (ইবনে খুযায়মা ১৪০৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ، وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, এরপর জুমায় উপস্থিত হবে, তারপর মনোযোগ দিয়ে (খুতবা) শুনবে এবং চুপ থাকবে, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনগুলো এবং আরও তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম ৮৫৭; আবু দাউদ ১০৫০; মুসনাদে আহমাদ ৯৪৮৪; ইবনে হিব্বান ১২৩১)
হাদিসের এসব বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জুমার দিনের বিশেষ আমল হচ্ছে, উত্তমরূপে গোসল করা, সবচেয়ে সুন্দর জামাটি পরা, খোশবু থাকলে ব্যবহার করা, একাগ্রচিত্তে খুতবা শোনা, মসজিদে কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সামনে যাওয়ার জন্য কাউকে ডিঙ্গিয়ে না যাওয়া এবং খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা ও কঙ্কর স্পর্শ না করা তথা অনর্থক কোনো কিছু না করা।
যে ব্যক্তি এভাবে জুমার নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার এক সপ্তাহ, বরং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ-খাতা মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন।