নারীর প্রতি ইসলামের নির্দেশ
পৃথিবীতে ইসলামের আগমনের আগে একজন নারী তার সতিত্ব রক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষার অধিকার, সমাজ সংসারে আত্মমর্যাদা ও মানবতাবোধের অধিকার, উত্তম আচরণ লাভের অধিকার, পিতা ও স্বামীর সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
এমনকি ইসলাম পূর্ব সমাজে কন্যা সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করাও ছিল মারাত্মক অভিশাপ। যার পরিণতিতে জীবন্ত কবরস্থ হওয়ার ভাগ্য বরণ করতে হতো তাদের। আত্যাচার নির্যাতন ছিল সে সমাজে অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। এক কথায় শুধু ভোগ ও আনন্দ উল্লাসের উপকরণ ছাড়া সব কিছুতেই নারীদেরকে অপাংতেয় ও কুলক্ষণে মনে করা হতো।
চরম নির্মমতার শিকার নারীদেরকে সবদিক থেকেই ইসলাম তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তাও প্রদান করেছে ইসলাম। অধিকার নিশ্চিতে নারীর প্রতি কিছু নির্দেশনাও আরোপ করেছে ইসলাম। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
>> সতিত্ব রক্ষা
ইসলাম নারীকে তার শ্রেষ্ঠ সম্বপদ সতিত্ব রক্ষার অধিকার দিয়েছে। আর পুরুষকেও গুরুত্ব দিয়েছে যাতে তার সতিত্বের অধিকার সংবরণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি ঈমানদারদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে আর নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য সতিত্ব রক্ষার উপায়। আল্লাহ এ সম্বন্ধে অবগত আছেন যা তারা সম্পন্ন করে। আর হে রাসুল! আপনি বিশ্বাসী মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন পুরুষদের সামনে আসলে তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন না করে”। (সুরা নূর : আয়াত ৩০-৩১)
>> শিক্ষার অধিকার
দুনিয়া ও পরকালের সঠিক শিক্ষাই নারী ও পুরুষ উভয়কে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে পারে। এ কারণে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্ঞানার্জনের বিষয়ে নারী ও পুরুষ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্বনবীর বক্তব্য হলো- ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ এবং নারীর ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)
>> উত্তম আচরণের অধিকার
নারীদের সাথে ক্ষমা, মার্জনা, কোমলতা ও স্নেহ মমতা পূর্ণ উত্তম আচরণের জোর নির্দেশ ও শিক্ষা দিয়েছেন বিশ্বনবী। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহিলাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার নির্দেশ মেনে চল। কারণ তোমাদের পাঁজর থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।
আর সবচেয়ে উপরের পাঁজর বেশী বাঁকা হয়ে থাকে। যদি তোমরা তাকে সোজা করার চেষ্টা কর তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর তার অবস্থার ওপর ছেড়ে রাখলে ও সব সময় বাঁকাই থাকবে। অতএব মহিলাদের বিষয়ে উত্তম আচরণ করার ব্যাপারে আমার নির্দেশ গ্রহন করে নাও।’ (বুখারি)
>> উত্তরাধিকারের অধিকার
পিতা, স্বামী ও নিকটাত্মীয়ের সম্পদের আর্থিক নিশ্চয়তা ও উত্তরাধিকার প্রদানের বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় সুস্পষ্ট নির্দেশ এসেছে।
পিতা ও নিকটাত্মীয়দের সম্পদের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘নারীদেরও অংশ রয়েছে ঐ সমস্ত সম্পদে, যা তাদের পিতা ও নিকটাত্মীয়গণ রেখে গেছে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭)
স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ। এমনকি মোহর প্রদান ছাড়া দাম্পত্য জীবনই বৈধ নয়। স্ত্রীদের মোহর প্রদান প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের মোহর স্বেচ্ছায় খুশি মনে আদায় কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)
স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পদেও রয়েছে স্ত্রীর সুস্পষ্ট উত্তরাধিকার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্ত্রীদের জন্য এক চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও, যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ যা তোমরা ছেড়ে যাও। ওসিয়াতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১২)
>> খেদমত পাওয়ার অধিকার
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি তাঁকে পরপর তিনবার এ কথাটি জিজ্ঞাসা করলেন। তিনিও মায়ের খেদমতের কথা তিনবার বললেন। লোকটি যখন চতুর্থবার খেদমতের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন বিশ্বনবী বললেন, তোমার বাবার।
পরিশেষে…
ইসলামই একমাত্র শ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা। যেখানে নারী ও পুরুষের অধিকার ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা এবং সমুন্নত করেছে। বিশেষ করে নারীকে দিয়েছে একমাত্র অনুপম জীবনাদর্শ। শুধু তাই নয়, নারীকে ব্যক্তিগত জীবনের সব অধিকার অক্ষুন্ন রাখার অধিকারও দিয়েছে ইসলাম।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম প্রদত্ত সর্বোত্তম আদর্শগুলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকরের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের অধিকার বাস্তবায়নের অধিকার প্রদান করা।
আল্লাহ তাআলার বিধান অনুসারে সমাজের সর্বস্তরে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে নারী অধিকার আদায়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।