‘মামলা তুইল্লা নিতে কন, নইলে কোপায় মাইরালামু’ হুমকি আওয়ামী লীগ নেতার
লক্ষ্মীপুরে মো. জাকির হোসেন (১৪) নামে এক কিশোরকে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের ঘটনার মামলা তুলে না নিলে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন দ্বিতীয় আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা গোরফান।
গতকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চররমনী গ্রামে সাংবাদিকদের সামনেই এ হুমকি দেন তিনি।
অভিযুক্ত গোরফান চররমনী মোহন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি একই এলাকার মৃত আব্দুস রশিদের ছেলে।
জাকিরকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে উত্তেজিত কণ্ঠে গোরফান বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্য শুধু হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছি। প্লাস দিয়ে মনিরসহ অন্যরা আঘাত করছে। আমি তাদের বকা দিয়েছি। এজন্য মামলা করতে হয়? আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ এলাকায় আমার ওপরে কথা বলার কেউ নেই। এরা চোর। জাকিরের বাপ আলমগীরকে মামলা তুইল্লা নিতে কন, নইলে আমি কোপাই মাইরালামু। ‘
গোফরান আরও বলেন, ‘আলমগীরের ছেলে জাকির আমার আত্মীয়ের ঘরে চুরি করে নগদ পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। এজন্য কয়েকজন ছেলে তাকে বাড়ি থেকে ধরে আনে। টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা এখন উল্টো মামলা দিয়েছে। আলমগীর মামলা না তুললে তার বাপ তুলবে। ’
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহনে চুরির অপবাদে কিশোর জাকির হোসেনকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে প্লাস দিয়ে চামড়া টেনে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর আহত শিশুর বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গোরফানসহ ছয়জনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি (সদর) আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক তারেক আজিজ মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর সদর মডলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
অন্য আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার চররমনী ইউনিয়নের চর রমনী গ্রামের গোরফানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, বাদশা মিয়ার ছেলে মনির হোসেন, আবুল কালাম ফরাজির ছেলে মনির, কালাম ভূঁইয়ার ছেলে মাকছুদ আলম ও মৃত মজিবুল হকের ছেলে শাহ আলম।
ভুক্তভোগী শিশু জাকির একই ইউনিয়নের মধ্য চররমনী মোহন গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদী আলমগীর হোসেন। প্রতিনিয়তই গোফরানসহ অন্য আসামিরা মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মামলা করার পর থেকে আসামিরা বাড়িঘরে এসে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে। না হলে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই। ’