বিনিয়োগের নামে জুয়ার অ্যাপ: পৌনে ২০০ কোটি টাকা সরিয়েছে ভারতের গেমিং কোম্পানি
গেম বানানোর কথা বলে বাংলাদেশে মাত্র সোয়া কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভারতের গেমিং কোম্পানি মুনফ্রগ ল্যাবস প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। তবে গেম না বানিয়ে একটি তাসের খেলা অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা সরিয়েছে ভারতের ওই গেমিং কোম্পানিটি। বাংলাদেশে সকল ধরণের জুয়া নিষিদ্ধ হলেও অনলাইন গেমিং সেক্টরে বিনিয়োগের কথা বলে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ নামে তিন তাসের এই জুয়া ছড়িয়ে দিয়েছে ভারতের কোম্পানিটি। শর্ত থাকলেও তারা গেম ডেভেলপমেন্টে বাংলাদেশে কোনও দৃশ্যমান বিনিয়োগ করেনি। কেবল ভারতে প্রচলিত ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ নামে তাসের খেলাটিকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে যে জনবল ও খরচ দরকার হয়েছিল, তাই করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুমোদিত হওয়ায় বৈধভাবেই বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা সরিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিমের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে। সিটিটিসি ছাড়াও সরকারি একাধিক তদন্ত সংস্থা এই গেমিং কোম্পানিটিকে নজরদারিতে রেখেছে। ইতোমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের ওই দুইটি গেমিং কোম্পানি সুইডিশভিত্তিক অপর আরেকটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টাকা পাচার করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ভারতের গেমিং কোম্পানি যেভাবে বাংলাদেশে আসে
২০১৭ সালে ভারতের একটি গেমিং এক্সপোতে যান বাংলাদেশি তরুণ জামিলুর রশীদ। সেখানে বসে ভারতের গেমিং কোম্পানি ‘মুনফ্রগ ল্যাবস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ গেমের বাংলাদেশি এজেন্ট হয় জামিলুর রশীদ। তিনি প্রথমে মুনফ্রগের বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তবে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া ভারতের কোম্পানিটি বাংলাদেশে গেমটিকে আরও ছড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা করে। এরপর মুনফ্রগ বাংলাদেশে বৈধভাবে ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা শুরু করে।
সরকারি একাধিক তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, অনলাইনে তিন তাসের এই খেলাটি জুয়া আইনে বাধা কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আইনজীবীরা মতামত দেন। আইনজীবীরা বাংলাদেশের দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট বা জুয়া আইনে গেমটি বাধা পড়ে কিনা তা যাচাই করেন। তারা মতামত দেন—এটা জুয়া আইনের অধীনে পড়ে না। এরমধ্যে জামিলুর রশীদ নিজে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ‘উল্কা গেমস প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি গেম কোম্পানির অনুমোদন নেন। ২০১৯ সালে উল্কার সঙ্গে ভারতের গেমিং কোম্পানি মুনফ্রগ চুক্তি করে। বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে, তাই উল্কাকে এক শতাংশ শেয়ার দেয় মুনফ্রগ। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসের দিকে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ বৈধভাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে। দ্রুত এই গেম শহর-নগরে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও খেলোয়াড়রা বলছে এটি জুয়া
‘তিন পাত্তি গোল্ড’ মোবাইলে অ্যাপস ডাউনলোড করেই খেলা যায়। এখানে তিন পাত্তি গোল্ডসহ মোট চারটি গেম রয়েছে। অপর তিনটি গেম হলো—রামি, আন্ধর বাহার ও পোকার। তবে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ বেশি জনপ্রিয়।