যে জিকিরের বিনিময়েই হেসে হেসে জান্নাতে যাবে মুমিন!
যাদের জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সতেজ থাকবে, তারা হেসে হেসে জান্নাতে যাবে বলেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিকিরকারী মর্যাদা ও ফজিলত কতবেশি। জিকির এমন একটি বিশেষ নফল ইবাদত যে, এটির জন্য ধরাবাঁধা কোনো সময় নেই। মুমিন যখনই ইচ্ছা জিকির করতে পারবে। আর এ জিকিরের বিনিময়েই সে হেসে হেসে জান্নাতে যাবে।
এ জিকির যে কোনো সময়েই করা যায়। জিকির সাধারণত তিন ধরনের। ১. জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকির। ২. জিকিরে কালবি বা আন্তরিক জিকির। ৩. জিকিরে আমালি বা কার্যত জিকির। আমলি জিকির হলো বাস্তব কর্মের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করাও আল্লাহর জিকির। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ৪০ বার তাকে স্মরণ করার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো। ’
ইসতেগফার হলো আল্লাহর জিকিরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়। ক্ষমা চায়। অনুতপ্ত হয়ে অন্যায় থেকে সঠিক পথে ফিরে আসে। ফলে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেন।
ইসতেগফার প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। ’ ইসতেগফার করতে হবে নিজের গুনাহ ক্ষমা করানোর জন্য। কেউ রিজিক বাড়ানোর উদ্দেশে ইসতেগফার করলে তার ইসতেগফার কবুল হবে না। বান্দা নিজের গুনাহ, নিজের অবাধ্যতার প্রতি লজ্জিত হয়েই আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন এবং তার রিজিক বাড়িয়ে দেবেন।
আল্লাহর জিকিরের মধ্যে সর্বোত্তম আরেকটি জিকির হলো- কালেমার জিকির। অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকির। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম জিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং সর্বোত্তম দোয়া হলো ‘আল-হামদুলিল্লাহ’। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)
২. হজরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে একনিষ্ঠতার সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনোদে আহমদ)
৩. হজরত ইতবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে। (বুখারি-মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
৪. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! সৃষ্টির মধ্য হতে আপনার উম্মতের মধ্যকার এমন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান যে ব্যক্তি একদিন হলেও ইখলাসের সঙ্গে এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই এবং সে এর উপর মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসনাদে আহমদ)
‘লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহও এটি জিকির। হাদিস শরিফে আছে, এটি জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি। এটি দৈনিক ১০০ বার পড়তে হবে। এ সবই মহান আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ। মহান প্রভু ঘোষণা করেন-
‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করবো।’
মনে রাখতে হবে, যে হৃদয়ে আল্লাহর জিকির আছে, সেটি জীবিত হৃদয়, আর জিকিরবিহীন হৃদয় হলো মৃত হৃদয়ের সমান। জিকিরে জিহ্বা সতেজ থাকলেই কেবল বান্দা হাসতে হাসতে জান্নাতে যেতে পারবে।
শুধু তা-ই নয়, জিকিরকারীকে শয়তান সহজে খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। জিকিরকারী জিকির করতে থাকলে তার হৃদয়ে গুনাহ করার মজা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। সে ভালো কাজের দিকে আগ্রহী হতে থাকে। জিকিরকারীর হৃদয়ে নেকির মজা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদের জবান, নিজেদের ঘর, নিজেদের আঙিনাকে জিকিরের পরিবেশে তৈরি করা। সব সময় আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা। নিজ নিজ বাড়িতে ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকারের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা। অবসর সময়ে যেখানে বসে আল্লাহর জিকির করা যায়। এ হাদিসের প্রতি লক্ষ্য রাখাও জরুরি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘তোমাদের ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ো না।‘
কবরে যেমন কোনো আমলের সুযোগ থাকে না, তেমনি নিজেদের ঘর আমলহীন বানিয়ো না। যদি নিজেদের ঘরকে আল্লাহর রহমত দ্বারা পূর্ণ রাখতে চাও, তবে ঘরে নিয়মিত আল্লাহর জিকির করো।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত জিকির করার তাওফিক দান করুন। জিকিরে নিজেদের জিহ্বাকে সতেজ রাখার তাওফিক দান করুন। হাসতে হাসতে জান্নাতে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।