‘আমার বাবারে কেন মারল’ প্রশ্ন মুন্সীগঞ্জ আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত স্বজনের
‘আমার বাবা কোনো দল করত না। কোনো পক্ষে ছিল না। কখনো ঝগড়াঝাঁটিতেও যাইত না। তাহলে আমার বাবারে কেন মারল?’ এই প্রশ্নগুলো সদর উপজেলার বকুলতলা এলাকায় মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত মনির হোসেন মোল্লার সন্তানদের।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার বকুলতলা এলাকায় মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত মনির হোসেন মোল্লার বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
নিহত মনির হোসেন মোল্লা মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের বকুলতলা এলাকার মোতালেব মোল্লার ছেলে। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ে। দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন।
দুপুরে মনির হোসেন মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে স্বজনদের জটলা। মাঝখানে বসে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী, সন্তান ও বোনেরা। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সান্ত্বনা দেয়া যাচ্ছিল না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া এবং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ বেধেছে। রক্তাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৭ অক্টোবর দুপুরে ইউনিয়নের বকুলতলা এলাকায় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়ান। বিকেলের দিকে উভয় পক্ষ গোলাগুলি শুরু করে। এ সময় তাদের ছোড়া গুলিতে মনির হোসেন মোল্লাসহ ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনির হোসেন মারা যান। ১৫ জনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে আধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মীমাংসা করতে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। পক্ষ দুটি খুবই উগ্র। কারো কথাই শোনেন না তারা। বারবার তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।’
মনির হোসেন মোল্লার মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার বাবার সব সময় বাড়িতেই থাকতেন। নামাজের সময় শুধু মসজিদে যেতেন। গতকাল আমার বাবা নামাজ পড়তে গেলেন। নামাজ শেষে বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। গুলি করে তাকে লাশ করে ফেলা হলো।’
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মঞ্জু বেগম খানিক পরপর বিলাপ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘এলাকায় কিছুদিন পরপর পক্ষ দুটি সংঘর্ষে জড়ায়। তাদের কারণে আমরা এলাকায় শান্তিমতো থাকতে পারি না। আমার স্বামীকে সংঘর্ষের সময় বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। আমার স্বামী আমাকে বলেছিল, আমি কোনো দলাদলিতে নেই। আমাকে কেউ কিছু বলবে না। নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে আসবো। অথচ এই নিরীহ মানুষটাকেই গুলি করে মেরে ফেলল তারা।’