কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির (ক্যাম্প) এখন রীতিমতো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। মাদকের কারবার, দোকানপাট, ব্যবসাবাণিজ্য এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পের ভেতর-বাইরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ।
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায় প্রতিদিনই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনির মতো ঘটনা ঘটছে। টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নিয়োজিত (পাহারাদার) রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক ও মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা)। এর মধ্যে নতুন করে ক্যাম্পে মাদকের চালানের সঙ্গে অস্ত্রও ঢুকছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তারা জানান, সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকা অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বেশির ভাই এখন ক্যাম্পে ফিরেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর অভিযানও পরিচালনা করা যেতে পারে। অন্যথায় যে কোনো সময় ক্যাম্পে বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকছেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু রাতে নয়, এখন দিনেও চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি ক্যাম্পেই পরস্পরবিরোধী একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শিবিরগুলোর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুনাখুনি, অপহরণ, গুম, লুটপাট স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে উখিয়া-টেকনাফের পুরো অঞ্চলে। নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে বিট পুলিশিং কাউন্সেলিং এবং নিয়মিত সচেতনতামূলক সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু আসছে না তেমন কোনো কার্যকর ফল।
সম্প্রতি উখিয়ার ১৮নং ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপরে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এতে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক রোহিঙ্গা নারী।
এছাড়াও গত পাঁচ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০টির মতো খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর ২০১৭ সালের পর থেকে ক্যাম্পে এ পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে ১২০টির বেশি। যারা খুন হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় প্রহরারত স্বেচ্ছাসেবক।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি মহাসচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ও বাইরে অসংখ্য সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে উঠেছে। তারা মাদকের ব্যবসা, অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এসব সশস্ত্র গ্রুপের টার্গেটে পরিণত হয়েছে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দল বেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মারধর করছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। এতে দিনদিন স্থানীয়দের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। সামনে হয়তো ক্যাম্পের আশপাশে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী রয়েছে বলে আমার মনে হয়। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করতে নিয়মিত সেনাবাহিনীর অভিযান অথবা ক্যাম্পের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিতে হবে। এছাড়াও মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার নিষিদ্ধ, ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল বন্ধ করা গেলে কিছুটা অপরাধ কমে আসবে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চললেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। আর মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে প্রতিদিন গোলাগুলি, অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেই চলছে। আমার মনে হয়, মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে আশান্ত করে তুলছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুত রয়েছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে এসব অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান হেলাল উদ্দিন।
অস্ত্র ঢোকার অভিযোগ : রোহিঙ্গাদের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, ১৮ ও ২২নং ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে সম্প্রতি বেশকিছু বিদেশি পিস্তল ও অস্ত্রের চালান ঢুকেছে। ক্যাম্প দখলে নিতে কথিত আরসাই এ অস্ত্রের চালান এনেছে মিয়ানমার থেকে।
অন্যদিকে আগে থেক অস্ত্রসজ্জিত হয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মাস্টার মুন্না ও নবী হোসেন গ্রুপ। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করেছে, মিয়ানমার সরকার তাদের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেও ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগুলোকে অস্ত্র পেতে সহযোগিতা করেছে। মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্র ও পিস্তল আনা হয়েছে। সূত্রটির দাবি, প্রত্যবাসন ঠেকাতে কৌশলগত কারণে ক্যাম্পকে অশান্ত করে রাখতে চায় মিয়ানমার সরকার।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী টেকনাফ রঙ্গীখালী এলাকার গিয়াস বাহিনী, সালমান শাহ বাহিনী এবং হোয়াইক্যং কাঞ্চরপাড়ার খাইরুল বশরসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ। তারা ইয়াবার চালানের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে বলে জানা গেছে।
২১ সেপ্টেম্বর হোয়াইক্যং কাঞ্চরপাড়ার মেজর (অব.) স্বাস্থ্য খানের হ্যাচারির পাশে বড় ধরনের একটি অস্ত্রের চালান হাতবদলের ঘটনা ঘটেছে।
এদিন মাগরিবের সময় বিদেশি পিস্তলসহ ১০ থেকে ১৫টি অস্ত্র খাইরুল বশরসহ কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। এ সময় বাদশা নামে একজন অস্ত্রের চালানটি লুটের চেষ্টা করলে মারামারির ঘটনাও ঘটে। সূত্রটি আরও বলছে, ইয়াবার চালানের বিনিময়ে খাইরুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করে থাকেন।
যদিও খাইরুল বশর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২১ সেপ্টেম্বরের অস্ত্র বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে ঘটনাস্থলে ৫ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে আমি জেনেছি। একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
সম্প্রতি পিস্তল হাতে কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবকের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অস্ত্র হাতে একটি ভিডিও বার্তায় ৪ মাঝিকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন মো. হাসিম নামের এক যুবক। ভিডিওতে ওই যুবক দাবি করেন, তার মতো ২৫ জন যুবককে অস্ত্র দিয়েছে ইসলামি সংগঠন ‘মাহাজ’ নামের একটি সংগঠন। খুনের শিকার মাঝিদের নামও বলেছেন ওই যুবক। তারা হলেন ১৮নং ক্যাম্পের হেড মাঝি জাফর, ৭নং ক্যাম্পের ইসমাঈল, কুতুপালং এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এইচ ব্লকের এরশাদ ও হেড মাঝি আজিমুল্লাহ।
রোহিঙ্গা যুবক আরও জানান, তাদের সামনে আরও বড় মিশন ছিল। কিন্তু তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই এই খারাপ জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান। তবে অস্ত্রধারী ওই যুবক গ্রেফতার না হওয়ায় এখনো এ ভিডিও বার্তার রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। ওই যুবকসহ অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া আরও কয়েকজনকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ক্যাম্পে ফিরেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজর রাখা একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, ১৮নং ক্যাম্পে সম্প্রতি কিছু অস্ত্র ঢুকেছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। এছাড়া ২২নং ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড়ে সশস্ত্র কিছু লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। একইভাবে ১৩ নম্বর ক্যাম্পেও কিছু অস্ত্র ও অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেডড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক মোহাম্মদ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে এখন সীমান্তে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ কারণে জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে এসেছে।
তারা মাদকের কারবার, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। টার্গেট করে রোহিঙ্গাদের মাঝি ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত কয়েকজন সেবককে খুন করেছে। তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনকেই ধরাও পড়েছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ক্যাম্পে নতুন করে অস্ত্র চালান ঢোকার প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কিছু তথ্য রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমাদের নিজস্ব সংস্থার গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। আপনারাও তথ্য দিয়ে সহয়তা করুন। সব ধরনের অপরাধীদের আইনের আওয়তায় আনা হবে।
গোয়েন্দা সংস্থা ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের মুখে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সশস্ত্র গ্রুপ আরসা। মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের জন্য আরসাকে দায়ী করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পের প্রায় নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আলোচিত নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্না গ্রুপের কাছে। এখন আরসা আবারও ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ ফিরে ফেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে ক্যাম্পে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ড ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সামনে আরও বড় ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক করেছে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।
এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত বলে নাম এসেছে ইসলামি মাহাস নামের এটি ধর্মীয় সংগঠনের। তবে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ইসলামি মাহাসের অস্তিত্ব ক্যাম্পে নেই। মূলত আরসা ও মাস্টার মুন্না গ্রুপের সদস্যরা ইসলামি মাহাসের নাম ভাঙিয়ে হামলা চালাচ্ছে, যাতে প্রশাসন ও রোহিঙ্গাদের চোখে ধুলা দেওয়া যায়।
অর্ধশতাধিক সশস্ত্র বাহিনী : গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে অর্ধশতাধিক ছোট-বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। প্রতিটি বাহিনীতে ৩০ থেকে ১০০ জন সদস্য রয়েছে। ক্যাম্পে অধিক পরিচিত সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে মাস্টার মুন্না গ্রুপ, আলোচিত নবী হোসেন গ্রুপ, মৌলবি ইউসুফ গ্রুপ, রকি বাহিনী, শুক্কুর বাহিনী, আব্দুল হাকিম বাহিনী, সাদ্দাম গ্রুপ, জাকির বাহিনী, পুতিয়া গ্রুপ, সালমান শাহ গ্রুপ, গিয়াস বাহিনী, মৌলবি আনাস গ্রুপ, কেফায়েত, জাবু গ্রুপ, আবু শমা গ্রুপ, লেড়াইয়া গ্রুপ, খালেদ গ্রুপ, শাহ আজম গ্রুপ, ইব্রাহিম গ্রুপ, খলিল গ্রুপ প্রভৃতি।
ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব গ্রুপের কিছু সদস্যের নামও পাওয়া গেছে। তারা হলেন আবদু জব্বার, নুরুল আমিন, শাহ আলম, মো. কেফায়ত, নুরুন নবী, আবদুল হাকিম, সুলতান, জকির আলম, মো. আব্দুল্লাহ ওরফে দাদা ভাই, বুলু, সুলতান, নবী হোসেন, সফিক, রফিক, মুর্তজা, হামিদুল্লাহ, আবদুস শুকুর, শরীফ হোসেন, মো. রহমান, সবেদ উল্লাহ, আব্দুল্লাহ, ফয়সাল, মো. সোলাম, হামিদ হোসেন, মুহিবুর রহমান, দিলদার, আবু সাইদ, তাহের, ফারুক, মুক্কুস, জুবায়ের, মুস্তফা, আব্দুল্লাহ আইদি, হাসন শরীফ, আব্দুল জলিল, হাফেজ উল্লাহ, আরমান খান, আইয়ুব, আমির হোসেন, নুর ইসলাম, আলী আকবর, কামাল, জাইবু রহমান, নাজিমুদ্দিন, সোনা উল্লাহ ও আরাফাত।
অভিযোগ আছে, নবী হোসেন, মাস্টার মুন্না গ্রুপসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিক্তিক বেশির ভাগ সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের যোগাযোগ রয়েছে। ক্যাম্প অশান্ত করার জন্য সন্ত্রাসী গ্রুপকে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ফ্রিতে দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। মূলত বিশ্বের দরবারে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে তুলে ধরা, আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে চায় মিয়ানমার।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরনের অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন এই পাঁচ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি, ধর্ষণ মামলা ৮৮টি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায়ের চেষ্টার মামলা হয়েছে ৩৯টি পাঁচ বছরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১১০টি হত্যা মামলা হয়েছে ১০০টি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি যদিও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি, মানব পাচারসহ ১২ ধরনের অপরাধে রোহিঙ্গাদের নামে মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরনের অপরাধে মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪০টি এই সময়ে অস্ত্র উদ্ধার ৯৮টি, মাদক উদ্ধার ৮৭৪টি, ধর্ষণ ২৩টি ও হত্যা মামলা হয়েছে ৩০টি।
জানতে চাইলে ১৪ এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন-অর-রশিদ বলেন, ক্যাম্পে অস্ত্রের চালান ঢুকছে কি না জানি না। তবে ক্যাম্পে হানাহানি ও সংঘাত বন্ধে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজ এবং ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এখন আগের চেয়ে আরও বেশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অস্ত্র চালান ঢোকার তথ্যটি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো মূল্যে আমরা ক্যাম্প সন্ত্রাস, অস্ত্র ও মাদকমুক্ত করতে চাই।
সেভাবে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোহিঙ্গাশিবিরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএন-এর অধিনায়ক এডিআইজি হাসান বারী নুর যুগান্তরকে বলেন, ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের তিনটি ইউনিটই সন্ত্রাসী, অস্ত্রাবাজি ও মাদক কারবার বন্ধে অভিযানের পাশাপাশি বিট পুলিশিং কাউন্সেলিং, সচেতনতা বৃদ্ধির সমাবেশসহ নানা ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সম্প্রতি সংঘটিত খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা অপরাধীদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এবং ক্যাম্পের বাইরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে নির্মূল করার জন্য কাজ করছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। স্থানীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে চলমান অভিযান আরও বেশি জোরালো হবে বলে উল্লেখ করে স্থানীয় যারা এসব সন্ত্রাসীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসপি।
সূত্রঃ যুগান্তর