আল্লাহ তাআলা যে সত্য গোপন করতে নিষেধ করেছেন-
নবিজির নবুয়তি যুগে আহলে কিতাবের অনুসারীরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মেশাতো, সত্য বিষয় গোপন করতো। এটি না করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে পাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্বভাব ছিল ইয়াহুদি ও নাসারাদের। এ স্বভাবের লোক এখনও আছে; তাদের জন্য এ আয়াতটি শিক্ষণীয়।
আহলে কিতাবের অনুসারীরা তাওরাতের কিছু নির্দেশ মেনে চলতো; আর কিছু নির্দেশ অস্বীকার করতো। তাওরাতে নবিজির যেসব গুণাগুণ এসেছে তা গোপন করতো। নবিজির ব্যাপারে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী এসেছে তা প্রকাশ করতো না। এ কারণে মহান আল্লাহ বিষয়টি তুলে ধরে ঘোষণা করেন-
وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪২)
আল্লাহ তাআলা তাওরাতের অনুসারণকারীদেরকে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত না থাকার কথা বলেছেন। তাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যে, ইয়াহুদিরা যেন সত্যকে প্রকাশ করে ও স্পষ্ট বর্ণনা করে। ন্যায় ও অন্যায়, সত্য ও মিথ্যাকে মিশ্রিত না করে, ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের বিদাআতকে ইসলামের সঙ্গে মিশ্রিত না করে। তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী পেয়েছে তা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রকাশ করতে কার্পণ্য না করে। এ বিষয়ে হাদিসে ও ইসলামিক স্কলারদের মতামত ওঠে এসেছে এভাবে-
১. হজরত কাতাদাহ ও হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘হককে বাতিলের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ো না এর অর্থ ইহুদিবাদ ও নাসারাবাদকে ইসলামের সঙ্গে এক করে দেখবে না কেননা, আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন হচ্ছে, ইসলাম। আর ইহুদিবাদ ও নাসারাবাদ (খৃষ্টবাদ) হচ্ছে বিদাআত বা নব উদ্ভাবিত বিষয়। সেটি কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়।
সুতরাং এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিভিন্ন ধর্মকে একাকার করে এক ধর্মে পরিণত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে নাজায়েজ।’ (আত-তাফসীরুস সহীহ)
২. হজরত আবুল আলীয়াহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর অর্থ তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে আল্লাহর বান্দাদের কাছে নসিহত পূর্ণ কর। অর্থাৎ তোমাদের কিতাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা আল্লাহর বান্দাদের কাছে বর্ণনা কর।’ (আত-তাফসীরুস সহীহ)
৩. আল্লামা শানকিতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তারা যে হককে বাতিলের সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে তা হচ্ছে, তারা তাওরাতের কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে। আর যে বাতিলকে হকের সাথে মিশিয়েছে তা হচ্ছে, তারা তাওরাতের কিছু অংশের সাথে কুফরি (অস্বীকার) করেছে এবং তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যেমন-
‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যেসব গুণাগুণসহ অনুরূপ যা কিছু তারা গোপন করেছে এবং মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। এর বর্ণনায় পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছুর উপর ঈমান আন, আর কিছুর সঙ্গে কুফরি (অস্বীকার) করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৫)
এ আয়াত দ্বারা আরও প্রমাণিত হয় যে, শ্রোতা এবং সম্বোধিত ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করে উপস্থাপন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
৪. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ, তোমরা আমার রাসুল মুহাম্মাদ এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন (কোরআন) তা সম্পর্কে যে জ্ঞান তোমাদের কাছে আছে তা গোপন কর না। অথচ তার সম্পর্কে তোমরা তোমাদের কাছে যে গ্রন্থ আছে তাতে নিশ্চিতভাবেই অনেক কিছু পেয়েছ।’ (আত-তাফসীরুস সহীহ)
৫. হজরত মুজাহিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আহলে কিতাবগণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গোপন করে থাকে। অথচ তারা তার ব্যাপারে তাওরাত ও ইঞ্জিলে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকে।’ (তাবারি)
এ আয়াত থেকে আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, কোনো ভয় বা লোভের বশবর্তী হয়ে সত্য গোপন করাও হারাম।
বর্তমান সময়েও কোরআন ও হাদিসের বাণীকে বিকৃত করার প্রয়াসে নিয়োজিত রয়েছে বিভিন্ন দল ও মতের লোকজন। এ আয়াতটি তাদের জন্য শিক্ষণীয় ও সতর্কবার্তা। আল্লাহ তাআলা বিপথগামী লোকদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং উক্ত আয়াতের শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।