আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তির রোগ-ব্যাধি হলেই কি গুনাহ মাফ করে দেন?
কোনো মুসলিম ব্যক্তির রোগ-ব্যাধি হলে তার যে কষ্ট হয় তার বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির গুনাহ মাফ করেন। মুমিন ব্যক্তির যে কোনো রোগ-ব্যাধি হলে এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। কী পরিমাণ গুনাহ মাফ করা হবে তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা না হলেও হাদিসে গুনাহ মাফের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। হাদিসের বর্ণনায় যা এসেছে, তাহলো-
১. হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!-
إِنَّكَ لَتُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا قَالَ أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ قُلْتُ ذ‘لِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ أَجَلْ ذ‘لِكَ كَذ‘لِكَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُه“ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا سَيِّئَاتِه„ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا
আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তোমাদের দুই ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম, এটি এজন্য যে, আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সওয়াব। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ তাই। কেননা যে কোন মুসলিম দুঃখ কষ্টে পতিত হয়, তা একটা কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন; এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে পড়ে।’ (বুখারি, মুসলিম)
২. হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ وَلَا مُسْلِمٍ وَلَا مَسْلَمَةٍ يَمْرَضُ مَرَضًا إِلَّا قَصَّ اللهُ بِه عَنْهُ مِنْ خَطَايَاهُ
‘যে কোনো মুমিন পুরুষ অথবা নারী, যে কোনো মুসলিম পুরুষ অথবা নারী রোগাক্রান্ত হয় এর বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহগুলো মোচন করে দেন।’ (আদাবুল মুফরাদ)
৩. হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত উম্মে সায়িব বা উম্মে মুসাইয়িব-এর জ্বর হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে সায়িব বা উম্মে মুসাইয়িব! তোমার কী হয়েছে যে, থরথর করে কাঁপছো? সে বললো, জ্বর হয়েছে, আল্লাহ তাতে বরকত না দিন। (এ কথা শুনে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
لَا تَسُبِّى الْحُمّٰى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِى آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ
‘জ্বরকে গালি দিও না। জ্বর তো আদম সন্তানের পাপ মোচন করে যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে।’ (শরহু মুসলিম)
৪. হজরত আবদুর রহমান ইবন সাঈদ তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন-
كُنْتُ مَعَ سَلْمَانَ وَعَادَ مَرِيضًا فِىْ كِنْدَةَ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ قَالَ : أَبْشِرْ ، فَإِنَّ مَرَضَ الْمُؤْمِنِ يَجْعَلُهُ اللهُ لَه كَفَّارَةً وَمُسْتَعْتَبًا وَإِنَّ مَرَضَ الْفَاجِرِ كَالْبَعِيرِ عَقَلَه أَهْلُه ثُمَّ أَرْسَلُوهُ فَلَا يَدْرِىْ لِمَ عُقِلَ وَلِمَ أُرْسِلَ
‘আমি একদিন সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন কিন্দায় এক রোগী দেখতে (অর্থাৎ তার কুশল জিজ্ঞাসা করতে) গিয়েছিলেন। যখন তিনি তার শয্যাপাশে উপস্থিত হলেন তখন বললেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা, আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার রোগকে তার গুনাহসমূহের কাফফারা এবং কৈফিয়তস্বরূপ গ্রহণ করেন। আর পাপী ব্যক্তির রোগ হল ঐ উটের মত যাকে তার মালিক পা মিলিয়ে বাঁধল। আবার ছেড়ে দিল অথচ সে জানলো না যে কেন তাকে বাঁধা হল আর কেনই বা তাকে ছেড়ে দেয়া হল।’ (আদাবুল মুফরাদ)
৫. ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
في هذه الاحاديث بشارة عظيمة للمسلمين …وفيه تكفير الخطايا بالامراض والاسقام ومصايب الدنيا وهمومها وان قلت مشقتها وفيه رفع الدرجات بهذه الامور وزيادة الحسنات وهذا هو الصحيح الذي عليه جماهير العلماء
‘এ হাদিসগুলোর মধ্যে মুসলিমদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ রয়েছে। … এর মধ্যে রোগ-ব্যাধি, দুনিয়ার বিভিন্ন বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তার বিনিময়ে গুনাহ মাফের ঘোষণা রয়েছে। যদিও এর জন্য সামান্য কষ্ট হোক না কেন এবং এগুলোর বিনিময়ে ব্যক্তির মর্যাদা উঁচু হয় এবং সওয়াব বৃদ্ধি পায়। এটিই জামহূর আলিমগণের বিশুদ্ধ মত।’ (শরহু মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোগ-ব্যাধিতে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। কারও রোগ-ব্যাধি হলে এর মাধ্যমে গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।