যেভাবে দরুদ পড়লে দূর হবে গুনাহ ও দুশ্চিন্তা
দুশ্চিন্তা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন কারণে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে কোনো কাজই সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই নানান ভাবে গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট একটি হাদিসের আমলে সহজেই গুনাহ থেকে যেমন মাফ পাওয়া যায় আবার দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বিশ্বনবি। আর তাহলো দরুদের আমল।
দরুদের আমলের মর্যাদা অনেক বেশি। ‘বিশ্বনবির প্রতি দরুদ পড়লে কী হয় আর না পড়লে কী হয়’ হাদিসে পাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিমের বর্ণনা থেকেই দরুদের গুরুত্ব উঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে দরুদ পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এভাবে-
اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)
যেভাবে দরুদ পড়লে দূর হবে গুনাহ ও দুশ্চিন্তা
১. হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার প্রতি অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করে থাকি। আমার দোয়ার কতটুকু পরিমাণ দরুদ আপনার জন্য নির্ধারণ করবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও। আমি বললাম এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন যতটুকু তুমি চাও। যদি তুমি বৃদ্ধি করো তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম অর্ধেক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার ইচ্ছা। তবে বৃদ্ধি করলে তোমারই কল্যাণ হবে। আমি বললাম তিন-চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা। তবে বৃদ্ধি করলে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম আমার সবটুকু দোয়াই আপনার জন্য নির্ধারণ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাহলে তো তোমার দুশ্চিন্তা দূরীকরণে এবং তোমার গোনাহ মোচনে এরূপ করাই যথেষ্ট। (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকিম)
হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদের সেসব রহমত ও বরকতের কথা তুলে ধরেছেন। আর তাহলো-
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে; বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
৩. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি (রহমতের) দরজা খুলে দেয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈম মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
৪. হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তার (দরুদ পাঠকারী ব্যক্তির) আমলনামায় ১০টি নেকি লেখা হবে।’ (তাবারানি)
শুধু তাই নয়, ফেরেশতারা দরুদ পাঠকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
৫. হজরত আমের ইবনে রবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুতবার মধ্যে এ কথা বলতে শুনেছি- ‘যে আমার উপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
দরুদ পাঠকারীর জন্য রয়েছে পরকালের শাফায়াত ও কল্যাণময় সুন্দর জীবণের ঘোষণা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ইরশাদ করেন-
৬. হজরত রুওয়াইফি ইবনে ছাবিত আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (তাবারানি)
৭. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর বেশি বেশি দরুদ পড়ার মাধ্যমে দুশ্চিন্তা ও গুনাহমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।