গরমে রুমে কিংবা গোসলখানায় নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে থাকার বিষয়টি কি বৈধ নাকি অবৈধ?
গরমের কারণে নিজ রুমে কিংবা গোসলখানায় নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে থাকার বিষয়টি কি বৈধ নাকি অবৈধ এটি অনেকেরই জানা নেই। একান্তে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে থাকলে তা কি ফরজ তরক করার হুকুমে পড়বে? ফরজ তরকের গুনাহ হবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট বক্তব্যই বা কী?
একান্তে নিজ কক্ষে নগ্ন থাকলে কিংবা শর্ট প্যান্ট পরে অর্ধনগ্ন হলে সেখানে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত না থাকলে তা ফরজ তরকের আওতায় পড়বে না। এ জন্য গুনাহও হবে না। তবে এটি তাকওয়া বা আল্লাহভীতির বিপরীত কাজ। তবে যখনই দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতিতে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হবে কিংবা শর্ট প্যান্ট পরবে তখনই তা ফরজ তরক হবে। আর তখনই ফরজ তরকের গুনাহও সংঘটিত হবে। তাহলো কবিরা (বড়) গুনাহ।
উলঙ্গ হয়ে থাকা, অর্ধনগ্ন হওয়া কিংবা শর্ট প্যান্ট পড়া এসবই নগ্নতার শামিল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নগ্নতা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নগ্নতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের সঙ্গে এমন সঙ্গী (কিরামান-কাতিবীন তথা দুই সম্মানিত লেখক) রয়েছেন, যারা পেশাব-পায়খানা ও সহবাসের সময় ছাড়া আলাদা হন না। সুতরাং তোমরা তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।’ (তিরমিজি)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদিসে মানুষকে শালিনতা বজায় রাখতে নসিহত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনে, নিশ্চয়ই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারা যেন ইজার (লুঙ্গি) পরা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন গোসলখানায় তার স্ত্রীকে প্রবেশ না করায়।’ (তিরমিজি)
নগ্নতা ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকতে, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত বাহাজ ইবনে হাকিম রহমাতুল্লাহি তার বাবা ও দাদার (মুয়াবিয়া) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম , হে আল্লাহর রাসুল আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি বললেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সকলের দৃষ্টি থেকে তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, পুরুষেরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে? তিনি বললেন, যতদূর সম্ভব কেউ যেন আভরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর। আমি আবার প্রশ্ন করলাম , মানুষ তো কখনো নির্জন (একাকি) অবস্থায়ও থাকে। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাক্বদার। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
সুতরাং কোনো মুমিন মুসলমানের জন্য শোভনীয় নয় যে, সে একাকি বা নির্জনে থাকাবস্থায় নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে থাকবে। বরং আল্লাহ ও সম্মানিত ফেরেশতাদের ইজ্জত ও সম্মানে উলগ্নপনা থেকে বিরত থাকবে। আর দ্বিতীয় কোনো মানুষের সামনে নগ্নতা বা অর্ধনগ্নতা বা শর্ট জামা-কাপড় পরা কবিরা গুনাহের শামিল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গরমের কারণে একাকি হোক কিংবা গোসলখানায় হোক নগ্ন হওয়া কিংবা শর্ট প্যান্ট পড়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: জাগো নিউজ