ঢাকার হাতিরঝিল থানায় পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু
ঢাকার হাতিরঝিল থানায় হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা করবে বলছে ওই তরুণের পরিবার। মামলা না করা পর্যন্ত তারা সুমন শেখের লাশ নেবে না বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
শুক্রবার রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানা হাজতে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে জানায় পুলিশ। তবে পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে সুমন শেখের স্ত্রীর বড় ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য তারা আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলা করতে পারেননি। সোমবার তারা মামলা করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বোন জামাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। তাই কাল আমরা আদালতে মামলা করবো।’
মামলা না করা পর্যন্ত সুমন শেখের লাশ হাসপাতাল থেকে তারা নেবেন না বলে তিনি জানান। ময়নাতদন্তের পর সুমন শেখের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
তিনি জানান, এনিয়ে যাতে বিক্ষোভ না হয় সেজন্য পুলিশ তাদেরকে গোপনে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাতে তারা রাজি হননি। তারা বলেছেন মামলার পর তারা লাশ বুঝে নেবেন।
পুলিশ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সুমন শেখ নামের ওই যুবককে পশ্চিম রামপুরের ওয়াপদা রোডের বাসা থেকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ ছিল বলে জানায় পুলিশ। সুমন শেখ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে গত ১৩ অগাস্ট একটি চুরির ঘটনায় তদন্তে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে হাতিরঝিল থানা হাজতখানায় রাখা হয়।
সেখানে রাতে ভেন্টিলেটরের লোহার গ্রিলের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজীমুল হক বলেন, থানার সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট- হাজতখানার ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সাথে পরনের ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে সুমন আত্মহত্যা করেন।
ওই সময় থানায় যে ডিউটি অফিসার ও কনস্টেবল দায়িত্বে ছিলেন তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
সুমনের মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা।
সুমন শেখের স্ত্রী জান্নাত আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, রাতে পুলিশ তার স্বামীকে থানায় আনার সময় তাকে মারধর করেছে। থানা হাজতে নির্যাতনে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এমনকি তারা যখন তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশের কর্মকর্তারা।
সুমন শেখের ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি