অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পথে এগোচ্ছে বিজেপি!
রাম মন্দির, কাশ্মির থেকে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে এবার ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পথে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। প্রাথমিকভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে ওই আইন পাস করানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন অমিত শাহেরা। সূত্রের মতে, পরবর্তী ধাপে লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে গোটা ভারতের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড আইন সংসদে আনতে চায় দল। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সব ধর্মের মানুষ একই রকম পারিবারিক, বিবাহ, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মানতে বাধ্য হবেন। বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভালো করেই জানেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে মুসলিমদের পার্সোনাল ল’ বোর্ডের অস্তিত্ব থাকবে না। বিরোধিতায় নামবে সংখ্যালঘু সমাজ ও বিরোধীরা। যাকে পুঁজি করে ভোটের আগে মেরুকরণের তাস খেলার সুযোগ পাবে শাসক দল।
উত্তরাখণ্ডে ভোটের আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে এলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। বিজেপি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই বিল আনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ধামী সরকার। উত্তরাখণ্ডের ধাঁচেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে যাতে ওই আইন পাশ হয়, সে জন্য অমিত শাহের নেতৃত্বে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল মধ্যপ্রদেশের ভোপালে সে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সাথে বৈঠকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন অমিত শাহ।
বৈঠকে তিনি জানান, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করাটা দলের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপে দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে প্রথমে ওই আইন পাস হবে। তার পরে গোটা দেশের জন্য ওই আইন আনার কথা ভাবা হয়েছে। রাজনীতির অনেকের মতে, বিষয়টির সাথে সংখ্যালঘু সমাজের ভাবাবেগ জড়িত রয়েছে। অতীতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহেরা সংখ্যার জোরে সংসদে পাশ করিয়ে নিলেও, সামাজিকভাবে প্রবল বিরোধের সামনে পড়তে হয়েছিল শাসক দলকে। যে কারণে ওই আইন রূপায়ণের প্রশ্নে এখনো ধীরে চলো নীতি নিয়েই এগোচ্ছে কেন্দ্র। আগামী দিনে দেওয়ানি বিধি আইন সংসদে আনলে প্রবল বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে ওই আইন পাশ হলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা বুঝে নিতে চাইছেন অমিত শাহেরা। তার পরে তা সংসদে আনার কথা ভাবা হবে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রশ্নে সরব রয়েছে বিজেপি। রাম মন্দির নির্মাণ, জম্মু-কাশ্মিরের অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার, শিক্ষায় গৈরিকীকরণের মতোই সঙ্ঘ পরিবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রশ্নে নিরন্তর চাপ দিয়ে আসছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে তা সারা ভারতের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। যার মধ্যে রয়েছে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক প্রভৃতি। কিন্তু ভারতে মুসলিম সমাজে কিছু ক্ষেত্রে এখনো শরিয়ত বিধি চালু রয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সেই বিধি গুরুত্ব হারাবে। বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, ওই আইন কার্যকর হলে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে, অবসান ঘটবে লিঙ্গ বৈষম্যের। সার্বিকভাবে ক্ষমতায়ন হবে মহিলাদের। বিরোধীদের মতে, বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করতেই ওই বিল আনার কথা ভাবছে বিজেপি। এতে সংখ্যালঘু সমাজ আরো কোণঠাসা হবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘বর্তমানে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে ২০০-র বেশি জনজাতি তাদের নিজস্ব আইন মেনে চলেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে কোপ পড়বে তাতেও। ওই আইন সমাজকে যতটা ঐক্যবদ্ধ করবে, তার চেয়ে বেশি বিভাজন ঘটাবে।.
উত্তর-পূর্বের বেশির ভাগ রাজ্যেই যেখানে বিজেপির সরকার, সেখানে ওই আইন প্রযোজ্য হলে স্থানীয় জনজাতিদের ক্ষোভ অমিত শাহেরা কিভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাও দেখার।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা