সংকট বাড়ছে, নেপাল কি শ্রীলঙ্কার পথে?

0

দক্ষিণ এশিয়ার একের পর এক দেশ অর্থনৈতিক সংকটে ডুবছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কেউ ভালো নেই। এবার এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে নেপালের নামও। ফুরিয়ে আসছে দেশটির ফরেন রিজার্ভ। আসন্ন সংকট ঠেকাতে প্রবাসীদের দেশে অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে নেপাল সরকার। দেশটির পরিস্থিতিকে এখন অনেকেই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন। কিন্তু হঠাৎ কেনো এই সংকট? ভারতীয় গণমাধ্যম এশিয়ানেট নিউজের এক রিপোর্টে সে কারণই বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, নেপালের অর্থনৈতিক দুর্ভোগের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বেশ মিল রয়েছে।

এই দুটি দেশই পর্যটনের ওপরে ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পর্যটন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এতেই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে নেপালের অর্থনীতি। মাত্র ৮ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ১৮ শতাংশ কমে এখন ৯.৬ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। এ দিয়ে দেশটি ৬ মাস আমদানি চালু রাখতে পারবে।
নেপালের ফরেন কারেন্সির সব থেকে বড় অংশটি আসে বিদেশে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকে। এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পর্যটন। তবে কোভিড মহামারির কারণে এই দুটি উৎস থেকে অর্থ আসা একেবারে কমে যায়। গত দুই বছর ধরেই ধুকছিল নেপাল। তবে এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর উৎসব কুমার সিং বলেন, নেপালের এই সংকট আগে থেকেই ধারণা করতে পেরেছিল বিশ্বব্যাংক। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তারা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল তাতেই নেপালের অর্থনীতির দুর্বলতা উঠে এসেছিল। রিপোর্টে যদিও এই সংকটের জন্য আয়ের বৈষম্য এবং ম্যাক্রো-ইকোনোমিক ভারসাম্যহীনতাকে দায়ী করা হয়। বিশ্বজুড়ে কোভিডের প্রকোপ কমে আসায় নেপালে পর্যটক আগমনও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় তা অনেক কম। নেপালের স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ না হলে পরিস্থিতি আরেকটু ভালোর দিকে থাকতো। এই যুদ্ধের কারণে অনেক ইউরোপীয় নেপালে আসতে পারছেন না। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন উৎসব সিংও। তিনি কোভিড এবং রাশিয়ার যুদ্ধ দুটির সম্মিলিত প্রভাবকেই নেপালের এই সংকটের জন্য দায়ী করেন।
পরিস্থিতি সামলাতে সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়ানোয় মানুষজন বিদেশ থেকে বিলাসী পণ্য কেনা কমিয়ে দেবে বলে জানান ‘নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের’ মুখপাত্র গুনাকার ভাট্টা। এতে রিজার্ভ শক্তিশালী হবে। তবে নেপালের এই সংকট এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এমনটা বলতে নারাজ অনেক বিশেষজ্ঞ। তেমনই একজন দক্ষিণ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি। তিনি বলেন, নেপালের অর্থনৈতিক সংকট এখনো প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। যদিও ফরেন রিজার্ভ অনেক কমে এসেছে এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বাড়ায় অর্থনীতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে এখনই নেপালের অবস্থাকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করতে চান না এই গবেষক।

তিনি বলেন, এখনো নেপাল শ্রীলঙ্কার মতো বাইরের দেশগুলোর কাছে সাহায্য চায়নি। কিন্তু সাহায্য চাইলে প্রতিবেশী দেশ ভারত অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারত সফর করেছেন। সেখানে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ভারত আগেও শ্রীলঙ্কাসহ অন্য অনেক দেশকে সাহায্য করেছে। নেপালে সংকট সৃষ্টি হলেও ভারত একই আচরণ করবে। এ বিষয়ে একমত উৎসব সিংও। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশ যখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তখন ভারত সেখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নেপাল যাতে সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় সাহায্য পায় তা ভারত দেখবে।

নেপালে বেড়ে চলেছে সব ধরনের পণ্যের মূল্য। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করলে সমগ্র বিশ্বেই তেলের বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পায় বিশ্বজুড়ে। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। শ্রীলঙ্কা আগে থেকেই ঝুঁকিতে থাকলেও যুদ্ধের কারণে সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। নেপালের ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে। দেশটির মোট আমদানি ব্যয়ের ১৩ শতাংশই জ্বালানি তেলের পেছনে চলে যায়। ফলে তেলের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে গিয়ে চাপে পড়েছে অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়েছে বাজারের অন্য পণ্যের উপরেও। শ্রীলঙ্কার মতো নেপালও একটি আমদানি নির্ভর দেশ। সবাই এরইমধ্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভয়াবহ সংকট দেখেছে। এবার নেপালও সেই পথে আগাচ্ছে কিনা সামনের দিনগুলোতে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বিশ্বকে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com