মহাবিপদে শ্রীলঙ্কা, কতটুকু দায়ী চীন!
খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বলা হচ্ছে, ১৯৪৮ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
৫১০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের বোঝায় জর্জরিত ভারতের প্রতিবেশী দেশটি সম্প্রতি নিজেদের ঋণখেলাপি বলে ঘোষণা করেছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।”
ঋণ পরিশোধে স্থগিতাদেশ শ্রীলঙ্কার জন্য একটি শেষ অবলম্বন। কারণ ওই অর্থ জ্বালানি, খাদ্য, গ্যাস, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলি সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হবে।
এই বছর শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হত। যার মধ্যে রয়েছে ১০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সোভেরেন বন্ড, যার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে জুলাই মাসে।
বন্ডহোল্ডার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য দেশের প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অর্থ পরিশোধ করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়। দেশটি দীর্ঘ দিন ধরেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের অর্ধেকের কিছু কম আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের একটি বন্ডের মেয়াদ আগামী ২৫ জুলাই শেষ হবে।
পর্যটন নির্ভর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে কোভিড অতিমারির কারণে। যার কারণে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দেশের ভাণ্ডার।
হিসেব করলে দেখা যাবে যে, এই বছর শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা মেটাতে ৭০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। অথচ হিসেব অনুযায়ী, মার্চের শেষে দেশটির ভাণ্ডারে রয়েছে মাত্র ১৯০ কোটি ডলার।
কৌশলগত ঋণের ফাঁদ :
চীন হলো শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম ঋণদাতা। আর এই দ্বীপ রাষ্ট্রের মোট ঋণের ১০ শতাংশ এসেছে কমিউনিস্ট দেশটির কাছ থেকে। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে চিনের পরেই রয়েছে জাপান এবং ভারত। আর এই ঋণে ভারসাম্য না-থাকার কারণেই সঙ্কট মারাত্মক আকার নিয়েছে।
সমস্যা মেটানোর জন্য বিদেশী সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর ফলে চিনের উপর দেশটির নির্ভরতা বেড়েছে, যার কারণে ঋণের বোঝাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। আর পরিস্থিতিও খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে।
সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দরসহ নানা পরিকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য সেই ২০০৫ সাল থেকে বেজিংয়ের সাহায্য নিয়ে আসছে শ্রীলঙ্কা। যদিও এই সব প্রকল্প থেকে কোনও লাভই ঘরে তোলা যায়নি।
২০১৭ সালে একটি চীনা সংস্থাকে কৌশলগত হাম্বানটোটা বন্দরটি ইজারা দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কারণ এই বন্দর নির্মাণে বেইজিংয়ের থেকে নেয়া ঋণ তারা পরিশোধ করতে পারেনি। এই ভাবেই দ্বীপ রাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে ঋণের ফাঁদে জড়াতে শুরু করে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত ও পশ্চিমি দেশগুলো।
চীনের কাছে শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি ডলার, যা তার মোট বৈদেশিক ঋণ ৪৫০০ কোটি ডলারের প্রায় ৬ ভাগের ১ ভাগ। এই বছরের জন্য শ্রীলঙ্কার থেকে চীনের পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি ডলার।
হংকং পোস্টের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতেই অলাভজনক পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য বেপরোয়া ভাবে ধার নেয়া দেশটিকে আজকে এই পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ঋণে কিছু ছাড় দেয়ার জন্য শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দিতে অস্বীকার করেছিল বেইজিং।