পুতিনের ‘বিশ্ব সেরা’ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র সারমাত নিয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

0

রাশিয়া বুধবার সারমাত নামের পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ক্ষেপণাস্ত্রকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এদিকে, সারমাত ক্ষেপণাস্ত্রটিকে “সেটান টু” বা শয়তান দুই নামে অভিহিত করা হচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যমে। তবে এর সফল উৎক্ষেপণে তারা উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না। খবর বিবিসির।

সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো গণমাধ্যমে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,রাশিয়ার মানুষের নজর ঘোরানোর জন্য এই উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সারমাত নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই অস্ত্রটিকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অথবা বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য কোনো হুমকি হিসেবে দেখছে না।

তিনি বলেছেন, ২০১১ সালের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি মোতাবেক সারমাত উৎক্ষেপণের আগে মস্কো সময়মত যুক্তরাষ্ট্রকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কত পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর কয়েকদিন পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পারমাণবিক শক্তিকে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জন কিরবি বলেন, (অস্ত্র) পরীক্ষা একটা নিয়মিত ব্যাপার। এই উৎক্ষেপণ সম্পর্কে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে কোনো উস্কানি ছাড়াই ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ, আগ্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নজর রাখছে।

সারমাত নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি চলার পথ পরিবর্তন করে তার লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এটা উৎক্ষেপণ করতে যে যানটি সাহায্য করে সেটা শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে চলে। এর ওয়ারহেডগুলো আলাদা আলাদা লক্ষে আঘাত হানতে পারে। এতে যে কটি ওয়ারহেড রয়েছে, যে গতিতে এটি যাত্রা করে তাতে সারমাত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ চলমান।

বার্তা সংস্থা তাস এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। বেশ কয়েকবার এর উৎক্ষেপণ পেছানোর পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দুই মাসের প্রাক্কালে এটির সফল পরীক্ষা চালানো হলো।

প্রাচীন কালে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কাজাখস্তান অঞ্চলে বাস করা সারমাতিয়ান নামে একটি যাযাবর গোত্রের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। ২০০০ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

দফায় দফায় এর নকশা ও কৌশলও পরিবর্তন করা হয়। এটা তৈরির খরচও বেড়েছে অনেকবার। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন সারমাত দক্ষিণ থেকে উত্তর মেরু উড়ে যেতে সক্ষম।

তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারমাত যে কয়টি পরমাণু ‘ওয়ারহেড’ বহন করতে পারে তার ওজন ১০ টনের মতো। ক্ষেপণাস্ত্রটির নিজের ওজন দুইশ টন। এটি চলার পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই এটিকে কোন ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা কঠিন।

২০১৫ সালে এটি তৈরির কাজ শেষ হয় তবে এটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ বারবার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর একটি ‘প্রোটোটাইপ’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালে এর ব্যাবহার শুরু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। সোভিয়েত আমলের ভয়েভোদো ক্ষেপণাস্ত্র যেটি ১৯৮৮ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটির স্থলাভিষিক্ত হবে সারমাত। এটি ব্যাবহারে রাশিয়াতেই প্রস্তুত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুতিন জানিয়েছেন।

রাশিয়ার মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা রসকসমসের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে এই বছরের অক্টোবরের দিকে তারা রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রেরণের কাজ শুরু করবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com