লন্ডনে বিক্ষোভের মুখে ইমরানের প্রাক্তন স্ত্রী, বেডরুমে ঢুকে পড়ার হুমকি নওয়াজপন্থীদের
প্রধানমন্ত্রীর কুরসি গিয়েছে তার। তবুও হেনস্তা থেকে রেহাই নেই ইমরান খান এবং তার পরিচিতদের। এবার ইংল্যান্ডে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথ। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রাক্তন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের অনুগামীরাই হামলা চালিয়েছে তার সারের বাড়িতে। জেমাইমার বেডরুমে ঢুকে পড়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, এই বিক্ষোভ পূর্ব পরিকল্পিত এবং পিএমএল-এন-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আবিদ শের আলির নেতৃত্বে ঘটানো হয়েছে।
গোটা ঘটনার ভিডিও টুইট করা হয় পাকিস্তানের জনপ্রিয় একটি গণমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একদল বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন বাড়ির সামনে। মাইক হাতে নিয়ে একজন বলছেন, “কারোর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস ছাড়ুন। যদি রাজনীতি করতেই হয়, তাহলে পাকিস্তানের হাই কমিশনে গিয়ে করুন।”
এরপরেই হুমকি দেন পিএমএল-এন অর্থাৎ পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের ওই সমর্থক। তিনি বলেন, “যদি নওয়াজ শরিফ অথবা তার সন্তানদের বাড়ির বাইরে প্রতিবাদ করা হয়, তাহলে আমরা আপনার বেডরুমে ঢুকব। প্রাচীর টপকে আপনার বাড়িতে ঢুকব।” ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সমর্থকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, যদি এই ধরনের কাজ থামানো না নয়, তবে আরো বড় আকারে বিক্ষোভ দেখানো হবে।
পাকিস্তান সংসদে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হওয়ার আগেই পিটিআই সমর্থকদের পথে নেমে প্রতিবাদ জানানোর ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী। তারপরেই লন্ডনে একটি রেস্তরাঁতে পিটিআই সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন নওয়াজ শরিফ। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই জেমাইমার বাড়িতে এই বিক্ষোভ। ঘটনার ভিডিও টুইট করে জেমাইমা জানিয়েছেন, “শ’খানেক মানুষ আমার মায়ের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আমার মায়ের বয়স ৮৮ বছর। একজন ব্যক্তি হুমকি দিচ্ছেন, জেমাইমা এবং তাঁর সন্তানরা বাড়ির বাইরে না এলে বেডরুমে ঢুকে পড়ব।” এই ঘটনা বৈধ কিনা, জেমাইমা সেই প্রশ্ন তুলেছেন লন্ডনের পুলিশ বাহিনীর দিকে।
প্রায় আঠেরো বছর আগে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ইমরান এবং জেমাইমার। দুই পুত্রসন্তান রয়েছে তাদের। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না থাকা জেমাইমাকে এহেন আক্রমণের মুখে পড়তে দেখে অনেকেই নিন্দা করেছেন। এই প্রতিক্রিয়া দেখে জেমাইমা জানিয়েছেন, “মনে হচ্ছে আমি নব্বই দশকের লাহোরে ফিরে গিয়েছি। আমার সন্তানদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে।” আরো জানা গিয়েছে, কাজের জায়গাতে বিরক্ত করা হচ্ছে জেমাইমাকে। পালটা দিয়ে আবিদ শের আলি পুরনো ছবি টুইট করেছেন, যেখানে জেমাইমা এবং তার সন্তানরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।
নওয়াজ ফিরলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়!
ঈদের পরই দেশে ফিরছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এমনটাই জানিয়েছেন তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা মিয়াঁ জাভেদ লতিফ। নওয়াজের প্রত্যাবর্তন বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা চলছে। ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য নওয়াজকে লন্ডন যাওয়ার অনুময়ী দেয় লাহোর হাই কোর্ট। তারপর আর দেশে ফেরেননি মুসলিম লিগের সুপ্রিমো। নির্ধারিত সময়ে দেশে না ফেরায় ২০২১ সালে নওয়াজ শরিফকে ‘ঘোষিত অপরাধী’র তকমাও দেয় ইসলামাবাদ হাই কোর্ট। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে নিজের ও কন্যা মরিয়ম নওয়াজের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেন নওয়াজ শরিফ। আর সেবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পালটেছে। প্রধানমন্ত্রী পদে এখন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ।
এদিকে, দেশে ফিরলেও দুর্নীতি মামলায় নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে শুনানি হবে বলে খবর। বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে না বসতেই বড় ভাই তথা পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে দেশে ফেরাতে সক্রিয় হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) প্রধানের কূটনৈতিক ভিসার ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই ভিসা ইস্যু করার ব্যাপারে তাকে ব্রিফও করেছেন কূটনৈতিক শাখার অফিসাররা।
উল্লেখ্য, পানামা পেপার্স মামলায় ২০১৭ সালে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গদি চলে গিয়েছিল নওয়াজের। তারপরই তার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু করে ইমরান সরকার। ২০১৮ সালে অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্ট আল-আজিজিয়া স্টিল মিল দুর্নীতি মামলায় নওয়াজকে সাত বছরের কারাবাসের সাজা দেয়। পাশাপাশি অ্যাভেনফিল্ড সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় সব মিলিয়ে মোট ১১ বছরের জেল হয় তার। তার উপরে ৮ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানাও হয়।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন