একইসাথে যেভাবে হাফেজা হন ফিলিস্তিনের এই ৪ যমজ বোন

0

দিমা, দিনা, সুজান ও রাজান-ফিলিস্তিনের চার যমজ বোন। তাদের বয়স তখন ১৮ বছর। একসাথে যেমন তাদের জন্ম, তেমনি তারা বেড়েও উঠছে একইসাথে। পড়তোও একই শ্রেণীতে।

শুধু তাই নয়, মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় চার বোনের স্কোরও সমান। এর চেয়ে বিস্ময়ের কথা হলো- যমজ এই চার বোন একইসাথে কুরআনের হাফেজা হয়েছিলেন।

অধিকৃত জেরুজালেম নগরীর উম্মে তুবা গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে দিমাদের জন্ম। তাই বলে মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায় যত্নের অভাব নেই দিমা-দিনার মা-বাবার। একইসাথে মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষায়ও পিছিয়ে থাকুক, তা-ও চাননি তারা। এ জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি পবিত্র কুরআনেরও হাফেজ হয়েছেন চার বোন।

একসাথে শুরু করে আবার একইসাথে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তারা। মানিকজোড়ের মতো তারা থাকেও একসাথে। তাদের ব্যাপারে বলা হয়, ‘যেন এমন উজ্জ্বল একটি হার, যার পুঁতি ও পাথরগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে পৃথক হলে স্বতন্ত্র চারটি হার হয়ে উঠবে।’

রাজান-সুজানদের মা নাজাহ আশ শানিতি (৫৪) জানান, তার মেয়েরা জেরুজালেমের আবু বকর সিদ্দিক রা: বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। সদ্যঃপ্রকাশিত (জুলাই-২০২৯) পরীক্ষার ফলাফলে সবার গড় নব্বইয়ের ঘরে। চার বোনের পারস্পরিক মিল, লেখাপড়ার প্রতি গভীর মনোযোগ ও সাফল্যে তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি তার মেয়েদের নিয়ে গর্বিত।

শানিতি আরো বলেন, ‘মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্যই। দোলনায় থাকতে আমিই ওদের পৃথক করতে হিমশিম খেতাম। এ জন্য চার মেয়ের জামায় আলাদা রঙের সুতা দিয়ে নকশা করে রাখতাম। তবে এখন আর তার প্রয়োজন হয় না। কণ্ঠস্বর শুনেই আমি বুঝতে পারি কোনটা কে।’

তিনি বলেন, ‘খুবই অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মেয়ে চারটি একসাথে অসুস্থ ও সুস্থ হয়। তারা মিলেমিশে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে আর আমিও চার বোনকে একই রকম পোশাক পরিধান করার জন্য জোর দিই। তবে তাদের শিষ্টাচারের ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি করতে চাই না।’

চার মেয়ের হাফেজ হওয়ার ব্যাপারে শানিতি বলেন, ‘শৈশব থেকেই কুরআন মুখস্থ করার জন্য তাদেরকে গ্রামের মসজিদে পাঠিয়ে দিতাম। একরঙা পোশাক পরে তারা মসজিদে পড়তে যেত। সেই দৃশ্য আমার চোখ শীতল করত।’

নিজেদের কুরআন হিফজ করার ব্যাপারে দিনা বলেন, ‘১৩ বছর বয়সে আমরা চার বোন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: হিফজ মারকাজে ভর্তি হই এবং ১৭ বছর বয়সে মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার এক বছর আগে হিফজ সম্পন্ন করি।’

দিমা বলেন, ‘একসাথে হিফজ শেষ করতে পেরে আমরা চার বোনই খুব আনন্দিত। এ ছাড়া ইসলামী শিষ্টাচার, নৈতিকতা ও আরবি ভাষায় আমরা একই সময়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। কুরআন হিফজ শুরু করার পর আমরা সব কিছুতেই বরকত লাভ করি। বিশেষত লেখাপড়া ও সময়ে।’

চার বোনের স্বপ্ন হলো- তারা ফিলিস্তিনের কোনো প্রসিদ্ধ ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়বে। তাদের বাবা মুরয়ি আশ শানিতি (৫৮) সন্তানদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এ জন্য তিনি আল্লাহর সাহায্য এবং সবার দোয়া কামনা করেন।

-২০১৯ সালের জুলাইয়ে আলজাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com