রমজানই জাকাত দেওয়ার উত্তম সময়

0

জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি। জাকাত দেওয়া ইসলামের ফরজ বিধান। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য জাকাত দেওয়া ফরজ। কারণ এটি ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। আর রমজানে জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম সময়।

জাকাত দেওয়ার মাধ্যমেই সম্পদের পবিত্রতা পরিশুদ্ধতা সমৃদ্ধির ধারাকে বাড়িয়ে দেয়। মুসলমানদের মধ্যে কেউ সম্পদের মালিক মানেই তিনি জাকাত দেবেন। সম্পদের পবিত্রতা পরিশুদ্ধতা এবং বৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মুমিন মুসলমান জাকাত দেয়। রমজানে জাকাত দিলে আদায়কারী ও গ্রহীতারা উভয়ই বেশি ‍উপকৃত হয়।

জাকাত দেওয়ার সেরা সময় রমজান

গরিব-দুঃখীর মাঝে জাকাত দেওয়ার সময় সুনির্দিষ্ট না থাকলেও রমজানই জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম সময়। আর ফেতরা ঈদুল ফিতরের আগে দেওয়াই উত্তম। রমজানে যে কোনো দান-সাদকাই অন্য সময়ের তুলনা ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়ার মাধ্যম। এ জন্যই অধিকাংশ ধনী ও সম্পদশালীরা রমজানে দান-সাদকা, জাকাত-ফেতরা আদায়ে খুব বেশি উদ্যোগী হয়ে থাকেন।

রমজানে মানুষের কাজের পরিধি কমে যায়। দুর্বলতা ও কষ্টের কারণে অভাবি, গরিব-দুঃখী মানুষ ঠিকভাবে আয়-রোজগার করতে পারে না। তাই রমজানে ধনীদের জাকাত-ফেতরা তথা আর্থিক দান-অনুদান গরিবদের জন্য অনেক বেশি উপকারি ও জীবন যাত্রার জন্য বেশ সহায়ক হয়।

উপকারিতা

জাকাত একদিকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সহায়-সম্বলহীন মানুষকে সবল ও স্বচ্ছল করে তোলার মাধ্যমে ধনী-গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মায়া-মমতার সুসম্পর্ক তৈরি করার অন্যতম সুযোগও এটি। রমজানে জাকাত-ফেতরা, দান-সাদকা করলে অভাবি মানুষগুলো একটু স্বস্থি পায়। রমজানের দিনগুলোতে উভয়ের মাঝে বিরাজ করে এক স্বর্গীয় পরিবেশ।

অন্যদিকে সম্পদশালীরা ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়ার আশায় রমজানে দান-সদকা ও জাকাত- ফেতরা প্রদানে উৎসাহিত হয়। আল্লাহর বিধান পালনেও পায় পরিপূর্ণ তৃপ্তি। অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নেকি পায়।

রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে যে কোনো নফল ইবাদতের বিনিময় ফরজ ইবাদত আদায়ের মতো। আর তা জাকাত, ফেতরা ও দান-অনুদানের সওয়াবের বেলায়ও ঘটে।

জাকাত দিতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি

১. জাকাত ধনীর সম্পদকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও বাড়িয়ে দেয়। ইসলামি শরিয়তে মানুষের প্রয়োজন পূরণের পর যদি নেসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ একবছর কারো কাছে গচ্ছিত থাকে তবে তাকে ওই গচ্ছিত সম্পদের জাকাত দিতে হয়।

২. কোরআনে ঘোষিত নির্ধারিত ৮ খাতেই জাকাতের অর্থ বণ্টন করতে হবে। আল্লাহ বলেন-

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

‘সাদাকাহ (জাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তআকর্ষণ করা হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান।’ (সুরা তওবাহ : আয়াত ৬০)

৩. বিভিন্ন মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমস্যায় জর্জরিতদের সহযোগিতা ও চিকিৎসাসহ অভাবগ্রস্ত মানুষের দুঃসময়ে সহায়তায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও দেওয়া যেতে পারে জাকাতে অর্থ। কিংবা নিজ উদ্যোগে নিজেদের জাকাতের অর্থের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে গরিবদের দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারেও মতামত দিয়েছেন বিশ্বের অনেক ইসলামি স্কলার।

রমজানে জাকাত আদায়ই হোক ধনী-গরিব পরস্পরের মধ্যে ইসলামের সেতু বন্ধন। যে বন্ধনের কথা বলেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘জাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন।’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা রমজানের সব ইবাদতই দেখেন এবং এর নেয়ামতও দান করেন। সওয়াব দেন ৭০ গুনের বেশি। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার জাকাত প্রদানে অনুগ্রহ দানের ঘোষণা দিয়েছেন একাধিক আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡهُ عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য আগে পাঠবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১১০)

وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ

‘তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সুরা নুর : আয়াত ৫৬)

 لٰکِنِ الرّٰسِخُوۡنَ فِی الۡعِلۡمِ مِنۡهُمۡ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ وَ الۡمُقِیۡمِیۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ الۡمُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ اُولٰٓئِکَ سَنُؤۡتِیۡهِمۡ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

‘আর যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেবো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৬২)

রমজানের এই পবিত্র সময়ে জাকাত দেওয়াই মুমিন মুসলমানের সম্পদশালীদের জন্য সর্বোত্তম সময়। তাই প্রত্যেক ধনী ও সম্পদশালীর উচিত, জাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত রমজানের বরকতময় সময়ে যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে কুরআনের ঘোষণায় নেয়ামত, বরকত, অনুগ্রহ ও মহাপুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সম্পদশালী ও ধনীদের রমজানে জাকাত আদায় করে অফুরন্ত সওয়াব ও ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। গরিব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com